
ছবি: সংগৃহীত
বছর ঘুরে আবার এসেছে ঈদ। উৎসব, আনন্দ আর ভালোবাসার এই বিশেষ দিনটি সবাই উদযাপন করেন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে। ব্যতিক্রম নন দেশের তারকারাও। সারা বছর টানা কাজ, শুটিং, প্রমোশন ও বিভিন্ন ধরনের ব্যস্ততার মাঝেও ঈদের ছুটি মানে তাদের জন্য একটু প্রশান্তির সময়, একটু অবসর, নিজের জন্য কিছু মুহূর্ত বের করে নেওয়ার সুযোগ।
ঈদ ঘিরে তারকারা কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কেমন কাটছে তাদের ঈদ—এসব জানতে কথা বলেছে রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, ফজলুর রহমান বাবু, রুনা খান, ঐন্দ্রিলা, রাশেদ মামুন অপু এবং সজলের সঙ্গে। চলুন জেনে নিই তাদের ঈদের গল্প।
ঢাকায়ই ঈদ, নস্টালজিয়ায় ভাসলেন মিথিলা
জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা জানালেন, এবারের ঈদ তিনি কাটাচ্ছেন ঢাকায়। তার মতে, "ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। আর এই আনন্দটা ছোটবেলায় অনেক বেশি অনুভব করতাম। সেসব দিন আর ফিরে আসবে না। তবে এখন আমার মেয়েকে দেখে সেই পুরোনো আনন্দটুকু মনে পড়ে। ওর চোখে-মুখে ঈদের আগমনী উচ্ছ্বাস দেখে আমি নিজের শৈশবকে খুঁজে পাই।"
তিনি আরও বলেন, "এবারের ঈদে আমি পরিবারকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাব, রান্না-বান্না করব, আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা হবে। চাইলেই তো প্রতিদিন দেখা হয় না। তাই ঈদে এই সময়টুকু খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবার জন্য রইল ঈদের শুভেচ্ছা—সবাই আনন্দে থাকুক, ভালো থাকুক।"
বাবু ফিরে গেলেন শিকড়ে, ফরিদপুরের ঘ্রাণে ঈদের আনন্দ
মঞ্চ, টিভি ও সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু এবারের ঈদ কাটাচ্ছেন নিজ শহর ফরিদপুরে। খুব সরলভাবে জানালেন তার অনুভবের কথা—"যেখানে আমার শৈশব, সেখানেই তো সবচেয়ে বেশি টান। ঈদের ছুটিতে আমি যখনই পারি, ফরিদপুর চলে আসি। পরিচিত মুখগুলো দেখি, ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেই। এখানে এক ধরনের মানসিক শান্তি পাই। ঢাকার ঈদ আর গ্রামের ঈদের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।"
তিনি বলেন, “এখানে এসে ঈদের মানেই অন্যরকম হয়ে যায়। মসজিদে একসঙ্গে নামাজ পড়া, কোরবানি দেওয়া, খেজুর-সেমাইয়ের ঘ্রাণ—সবকিছু মিলিয়ে ঈদের অনুভূতি আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে।"
আমেরিকায় কাটছে রুনা খানের ঈদ
চিত্রনাট্য ও চরিত্রের ভিন্নতায় খ্যাতি পাওয়া অভিনেত্রী রুনা খান এবারের ঈদ কাটাচ্ছেন ভিন্ন মহাদেশে। বললেন, "আমরা ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে আমেরিকায় এসেছি। সারা বছর কাজের ব্যস্ততা থাকে, শুটিং থাকে, ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে নানা টেনশন। কিন্তু ঈদটা আমি পুরোপুরি পরিবারকে দিতে চাই।"
তিনি আরও বলেন, "আমার মেয়ে এবার লম্বা ছুটি পেয়েছে। তাই আমরা আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিলাম দূরে কোথাও যাওয়ার। বিদেশে থাকলেও বাংলাদেশের ঈদের গন্ধটা মিস করি। তবে পরিবার একসঙ্গে থাকলে জায়গার বড় কোনো মানে থাকে না। এটাই তো ঈদের আসল সৌন্দর্য—পরিবার, ভালোবাসা, আর কিছু শান্ত সময়।"
ঢাকাতেই ঈদের আনন্দে মেতেছেন ঐন্দ্রিলা
অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা বলেন, "অনেকেই ঈদের সময় দেশের বাইরে চলে যান। কিন্তু আমি তা করতে চাই না। কারণ ঈদের সবচেয়ে বড় আনন্দটা আমার কাছে ঢাকাতেই। এখানে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা হয়, প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে গল্প হয়, নানা রকম রান্না হয়—যা অন্য কোথাও সম্ভব নয়।"
তিনি জানান, "ঈদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিই—কাপড়, সাজগোজ, মেনু ঠিক করা, পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্ল্যান করা। ঈদের দিন বাসায় আত্মীয়রা আসে, আমরা একসঙ্গে খাই, আড্ডা দিই। এই অনুভূতি বিদেশে গিয়ে পাওয়া যায় না। তাই আমি চেষ্টা করি, প্রতিটি ঈদ ঢাকাতেই কাটানোর।"
রাজশাহীতে ছেলেবেলার স্বাদে ফিরেছেন রাশেদ মামুন অপু
জনপ্রিয় অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু এবারের ঈদে ফিরেছেন নিজ শহর রাজশাহীতে। জানালেন, "অনেকদিন পর রাজশাহী এলাম। পরিবার, বন্ধু, চেনা রাস্তাঘাট—সব মিলিয়ে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। শুটিংয়ের ব্যস্ততায় সময়ই পাই না। এবার ঈদের পুরোটা সময় কাটবে পরিবারের সঙ্গে।"
তিনি বলেন, "বন্ধুদের সঙ্গে নদীতে গিয়ে মাছ ধরার পরিকল্পনা করেছি। বিকেলবেলা গাছতলায় আড্ডা, কোরবানি শেষে পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া—সবকিছু নিয়ে পূর্ণ ঈদ কাটবে বলে মনে হচ্ছে। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি—আনন্দটা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক।"
পুরানো ঢাকার টানে ঈদের দিনে ফিরছেন সজল
দর্শকপ্রিয় অভিনেতা সজল জানালেন, "ছোটবেলা থেকেই ঈদ পুরানো ঢাকায় কাটিয়েছি। আমাদের দাদাবাড়ি ওখানেই। সেই পুরোনো ঈদের স্মৃতিগুলো এখনো টেনে নিয়ে যায়। এবারও পরিকল্পনা অনুযায়ী ঈদের নামাজ পড়ে চলে যাব দাদাবাড়িতে। সেখানে কোরবানি, আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাটানো, অতিথিদের আপ্যায়ন—সবকিছু নিয়েই ব্যস্ত থাকব।"
তিনি বলেন, "পুরানো ঢাকার ঈদ মানেই অন্যরকম এক আবহ। আতর, সেমাইয়ের ঘ্রাণ, কুশল বিনিময়ের হাসি—সব মিলিয়ে এক গভীর আবেগের জায়গা। এখনকার ঈদে ছোটবেলার সেই মজা নেই ঠিকই, কিন্তু আমরা যারা তখনকার ঈদ অনুভব করেছি, তারা আজও সেটাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি।"
তারকারাও আমাদের মতো মানুষ—তাদেরও পরিবার আছে, শৈশব আছে, টান আছে নিজ শহরের প্রতি। ঈদ তাদের জন্যও পরিবারকে সময় দেওয়ার, ভালোবাসা ভাগাভাগি করার সময়। কেউ ঢাকায়, কেউ গ্রামে, কেউ আবার দূরদেশে—তবু ঈদের মূল অনুভূতিটা একটাই—আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। তাদের ঈদ যেমন কাটছে, তেমনি আমাদের ঈদও কাটুক ভালোবাসায়, আনন্দে ও শান্তিতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ