
ছবি: সংগৃহীত
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনে পশু জবাইয়ের পর সৃষ্ট বিপুল বর্জ্য দ্রুততম সময়ে অপসারণে এবার ব্যতিক্রমী সাফল্য দেখিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনস্থ সিটি কর্তৃপক্ষ। শনিবার (৭ জুন) ঈদের দিন বিকেল থেকেই শুরু হয়ে রাতের মধ্যেই শেষ হয় বর্জ্য অপসারণের মূল কার্যক্রম, যা সম্ভব হয়েছে সারাদেশে নিযুক্ত ৩৫ হাজার ২৭২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া শনিবার রাতে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, “সকল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। ৩৫ হাজার ২৭২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ঈদ আনন্দ বিসর্জন দিয়ে সুন্দর করেছেন আমাদের ঈদ উদযাপন। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।”
উপদেষ্টার এ ঘোষণার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রংপুর, কুমিল্লা এবং সর্বশেষ নবঘোষিত কক্সবাজার সিটি করপোরেশন—সকল শহরেই এবার নজিরবিহীন দক্ষতায় সম্পন্ন হয়েছে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ।
বিশেষ করে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ—দুই এলাকাতেই বর্জ্য অপসারণে লক্ষ্য ছিল ঈদের দিন রাতের মধ্যেই পুরো শহরকে বর্জ্যমুক্ত করা। দুপুর ২টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান দপ্তরে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেছিলেন, “দুই সিটিতেই আজ রাতের মধ্যে কুরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হবে। সিটি করপোরেশন নির্ধারিত যে সময় বেঁধে দিয়েছে, আশা করছি এর মধ্যেই তারা বর্জ্য অপসারণের কাজ শেষ করতে পারবে।”
তার এ আশাবাদী বক্তব্য বাস্তবে রূপ নেয় রাতেই, যখন নগরবাসী দেখতে পান পরিচ্ছন্নকর্মীদের ব্যস্ততা, শহরের অলিগলি পরিষ্কার হয়ে উঠছে দ্রুত গতিতে। ঈদের মতো একটি দিনে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটানোর বদলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করেছেন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত—এ দৃশ্য শহরবাসীর চোখে আস্থা এবং কৃতজ্ঞতার ছাপ ফেলেছে।
বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনগুলো আগেই একটি নির্ধারিত সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল—যাতে দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে সব পশুর বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। এ লক্ষ্যে প্রতিটি সিটিতে গঠন করা হয় কন্ট্রোল রুম, নিয়োজিত হয় অতিরিক্ত যানবাহন, মোতায়েন করা হয় পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিদর্শক।
বিশেষ করে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি আলাদাভাবে এলাকাভিত্তিক ওয়ার্ড পর্যায়ে ম্যানেজমেন্ট ইউনিট তৈরি করে যেখান থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কার্যক্রম তদারকি করা হয় সরাসরি। এছাড়া মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বাসিন্দারা বর্জ্য অপসারণের জন্য আবেদন করতে পারতেন, যা দ্রুত সাড়া পাওয়া এবং সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
সামগ্রিকভাবে ১২টি সিটি করপোরেশনে ৩৫ হাজার ২৭২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী এই কঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এদের মধ্যে একটি বড় অংশ ছিল অস্থায়ী কর্মী, যারা শুধুমাত্র ঈদের মৌসুমে নিযুক্ত হন। এ ছাড়া ছিলেন নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী, গাড়ি চালক, সুপারভাইজার এবং তদারকি কর্মকর্তারা।
এদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঈদের দিন রাতেই সিটি করপোরেশনগুলো নিজ নিজ এলাকাকে পরিচ্ছন্ন করে তোলে, যা শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষাই নয়, নাগরিকদের ঈদের আমেজ অক্ষুন্ন রাখতেও ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় মিডিয়াতে বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই বলেছেন, আগের তুলনায় এবার পরিচ্ছন্নতা দ্রুত, নিরবিচ্ছিন্ন ও অধিক কার্যকরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুততম সময়ে এ ধরনের বর্জ্য অপসারণ শুধু শহরের পরিবেশ রক্ষা করে না, বরং নগরবাসীর মধ্যে সিটি করপোরেশনের প্রতি আস্থা বাড়ায় এবং একটি উন্নত নগর ব্যবস্থাপনার দৃষ্টান্ত তৈরি করে।
একটি ঈদে পশু জবাই মানেই আগত বর্জ্যের চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা, পরিশ্রমী কর্মীবাহিনী এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্ব থাকলে সেই চ্যালেঞ্জও রূপ নেয় সফলতায়। ঈদের দিনে যারা শহর পরিষ্কারে নিযুক্ত ছিলেন, তারা হয়তো পরিবারের সঙ্গে ছিলেন না, কিন্তু লাখো মানুষকে সুন্দর পরিবেশে ঈদ উদযাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন।
এই ৩৫ হাজার ২৭২ জনের প্রতিটি হাত ছিল পরিচ্ছন্ন শহরের নির্মাতা। তাদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শুরু হওয়া ঈদের আনন্দ হয়ে উঠেছে আরও পূর্ণ, আরও অর্থবহ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ