
ছবি: সংগৃহীত
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের বিকাশে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, দেশের এসএমই খাতকে শক্তিশালী করা শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নয়, বরং এটি টেকসই শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
রোববার ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিল—‘অ্যাক্রেডিটেশন : ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের ক্ষমতায়ন (Empowering SMEs through Accreditation)’, যা বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় অত্যন্ত সময়োপযোগী ও অর্থবহ বলে মনে করেন তিনি।
বাণীতে ইউনূস বলেন, “এসএমই খাত আজ বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশেও এর প্রভাব সুস্পষ্ট। আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এসএমই খাত থেকেই আসে। দেশের কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশ সৃষ্টি হয় এই খাতের উদ্যোগের মাধ্যমে। বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই খাত হচ্ছে প্রবেশের প্রধান পথ।”
তিনি আরও বলেন, “এসএমই উদ্যোক্তারা আজ বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের প্রতিবন্ধকতা, ক্রেতা ও ভোক্তার চাহিদার দ্রুত পরিবর্তন, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার প্রয়োজনে দক্ষতার ঘাটতি এবং আর্থিক সংস্থান প্রাপ্তির সীমাবদ্ধতা তাদের অগ্রযাত্রায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন বহুপক্ষীয় সমন্বিত উদ্যোগ, যার অন্যতম উপাদান হলো অ্যাক্রেডিটেশন।”
প্রধান উপদেষ্টা অ্যাক্রেডিটেশনকে দেশের জাতীয় গুণগতমান অবকাঠামোর একটি মূল স্তম্ভ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক হতে হলে আমাদের পণ্য ও সেবার গুণগতমান আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে হবে। অ্যাক্রেডিটেশন পদ্ধতি এই লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। এটি পণ্য ও সেবার উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনের প্রতিটি ধাপে গুণগতমান নিশ্চিত করে। পাশাপাশি দক্ষ কারিগরি জনবল গড়ে তুলতে ও বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
তিনি জানান, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে মানোন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বিএবি বিভিন্ন খাতের ১৫৫টি সরকারি, বেসরকারি এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন সনদ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ল্যাবরেটরি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সনদ প্রদানকারী সংস্থা এবং পরিদর্শন সংস্থাগুলো।
বাণীতে ইউনূস সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান এবং অংশীজনকে এসএমই খাতের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে তাদের ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশ যে শিল্পায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে, সেখানে শুধুমাত্র বৃহৎ শিল্প নয়, বরং মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিই আগামী দিনের মূল চাবিকাঠি হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এসএমই-কে জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে গড়ে তুলেছে। আমাদেরও এখন সময় এসেছে এই খাতকে প্রয়োজনীয় সহায়তা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখার জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলার।”
প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি)-এর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং তাদের সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন। একইসঙ্গে তিনি এসএমই খাত সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাজীবী, মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান এবং সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
মুহাম্মদ ইউনূসের এই বক্তব্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এমন এক সময়ে যখন বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে এক অন্তর্বর্তী পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং অর্থনৈতিকভাবে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এই প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের বিকাশকে গুরুত্ব দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যেভাবে অ্যাক্রেডিটেশন ও গুণগতমান নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দিয়েছেন, তা ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক রূপকল্পে একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের সমন্বিত চিন্তাধারা বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশ শুধু দেশীয় উৎপাদনে নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে পারবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ