
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু আপডেট অনুযায়ী, মাত্র একদিনের মধ্যে ঢাকায় নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২১ জনে পৌঁছেছে। এই সংখ্যাটি গতকাল মাত্র দুই জনের থেকে অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই মশা জনিত রোগটির ঝুঁকির মাত্রা কতটা দ্রুত বাড়ছে তার একটি পরিস্কার ইঙ্গিত।
ঢাকা শহরের পাশাপাশি ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত সতর্ক হতে বাধ্য করেছে। সারাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী ঢাকায় আক্রান্ত হলেও অন্যান্য বিভাগেও সংক্রমণের মাত্রা তেমন কম নয়। চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজন, ময়মনসিংহে দুইজন এবং অন্যান্য অঞ্চলেও রোগীর উপস্থিতি ধরা পড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ডেঙ্গু আপডেট বাতায়নে শনিবার (৭ জুন) জানানো হয়, গত একদিনে সারাদেশে মোট ২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ২১ জন, যা দেশের রাজধানী হিসেবে উদ্বেগজনক। চট্টগ্রামে তিনজন ও ময়মনসিংহে দুইজন আক্রান্ত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
এর আগে গতকাল শুক্রবারের আপডেট অনুযায়ী দেশে মোট ৫৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগেই সর্বাধিক ৩৫ জন আক্রান্ত ছিলেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতেও ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী ছিলেন এবং চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগে যথাক্রমে ৬ ও ২ জন রোগী অবস্থান করছিলেন।
বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জমে থাকা পানি মশার প্রজননের জন্য উপযোগী আবাসস্থল তৈরি করেছে। বিশেষ করে ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে জল জমা থাকা ও নিকাশী ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মশার প্রজনন বেড়ে যাওয়ায় এই রোগটির সংক্রমণও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতা না থাকায় এবং সরকারি উদ্যোগে লার্ভা নিধন কর্মসূচি যথাযথভাবে না বাস্তবায়িত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হচ্ছে। ঢাকা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই মশক নিধন অভিযান শুরু হলেও কার্যকর সমাধান না হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মাত্রা বাড়ছে।
সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে আরও তৎপরতা ও সংহত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে, যাতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে এবং জনজীবন স্বাভাবিক থাকে। জনসাধারণকেও ঘরবাড়ি, আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে মশার প্রজনন রোধে সহযোগিতা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধুমাত্র রোগী শনাক্ত করাই যথেষ্ট নয়, বরং ডেঙ্গুর ঝুঁকি কমাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে লার্ভা ও পোকামাকড় নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। বৃষ্টির পানিতে ডেঙ্গু বাহক মশার লার্ভার বিস্তার দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকি বহুগুণ বেড়েছে, তাই এখনই সতর্ক না হলে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহরে ডেঙ্গু মোকাবিলায় বিশেষ নজরদারি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তবে সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাপক জনমতের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগই একমাত্র পথ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতিরোধে নাগরিকদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বাসাবাড়িতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা অতীব জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি তরফ থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য আপডেট প্রদান ও জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ডেঙ্গু এমন একটি রোগ যা প্রাথমিক পর্যায়ে ঠিকমত চিকিৎসা না নিলে বিপজ্জনক রূপ নিতে পারে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্তদের দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ও মশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক হতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখা একান্ত প্রয়োজন, যাতে করে দেশের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং ডেঙ্গুর কারণে জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ