
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে রাজধানীর বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’ এবং এর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে যেকোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, রাজনৈতিক মিছিল কিংবা শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যা বুধবার জারি হলেও বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে রোববার রাতে। গণবিজ্ঞপ্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬-এর ধারা ২৮ অনুসারে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হচ্ছে, এবং তা আগামী সোমবার (১০ জুন) থেকে পরবর্তী কোনো নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে যেসব এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো হলো—
বাংলাদেশ সচিবালয় এলাকা
প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়
কাকরাইল মসজিদ মোড়
অফিসার্স ক্লাব মোড়
মিন্টু রোড সংলগ্ন এলাকা
এই এলাকা গুলোতে জনসমাগম ঘটিয়ে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক কার্যক্রম, মানববন্ধন, শোভাযাত্রা, মৌনমিছিল, প্রতিবাদ কর্মসূচি বা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ইত্যাদি কোনো কর্মকাণ্ডই অনুমোদনযোগ্য নয় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ডিএমপি বলেছে, এসব এলাকায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যক্রম নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয়। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি এলাকা। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্দোলনের কর্মসূচি এবং হঠাৎ করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এসব এলাকায় জনসমাগম ঘটলে প্রধান উপদেষ্টাসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে, সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ডিএমপি ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে সর্তক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ওইসব এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজন হলে র্যাব, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্য এবং সিসিটিভি মনিটরিং জোরদার করা হবে। পাশাপাশি কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, অতীতেও রাজনৈতিক উত্তেজনা বা বিশেষ দিবস উপলক্ষে এসব এলাকায় সভা-সমাবেশ নিয়ন্ত্রণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ডিএমপি। তবে এবার তা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছাড়াই জারি করা হয়েছে, যার ফলে জনমনে কৌতূহল ও নানা গুঞ্জনও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যেহেতু এটি প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত, অনেকে মনে করছেন সামনের দিনগুলোতে রাজধানীতে কোনো রাজনৈতিক উত্তেজনার আশঙ্কা থাকতে পারে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে ঢাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে, কেউ যেন এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য না করেন। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কেউ এ বিষয়ে কোনো তথ্য বা সন্দেহজনক কিছু দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে ডিএমপি কন্ট্রোল রুমে জানানোর অনুরোধও জানানো হয়েছে।
নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার স্বার্থে ডিএমপি যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তা সাময়িক হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। এমন সিদ্ধান্ত নাগরিকদের স্বাভাবিক চলাচলের কিছুটা ব্যাঘাত ঘটালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা একটি নিরাপত্তামূলক প্রতিরোধ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এখন দেখার বিষয় হলো, নিষেধাজ্ঞার এই সময়কালে কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন তা চ্যালেঞ্জ করে কোনো কর্মসূচিতে যায় কিনা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ