
ছবি: সংগৃহীত
গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ‘ম্যাডলিন’ নামের ত্রাণবাহী জাহাজটি সোমবার সকালে ইসরায়েলি নৌবাহিনী আটক করেছে। জাহাজে থাকা ১২ জন মানবাধিকারকর্মীকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ সংক্রান্ত খবর জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এই আটকদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ তরুণ পরিবেশ কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, ব্রাজিলের থিয়াগো অ্যাভিলা এবং ফ্রান্স থেকে ছয়জন নাগরিক। ফরাসি নাগরিকদের মধ্যে অন্যতম একজন ইউরোপীয় সংসদ সদস্য রিমা হাসান, যিনি ফরাসি-ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত। এছাড়াও স্পেন ও তুরস্কের নাগরিকরাও এই যাত্রায় ছিলেন। তাদের প্রত্যেককে ইসরায়েল তাদের দেশে ফেরত পাঠাবে বলে নিশ্চিত করেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আটকদের দ্রুত মুক্তি ও দেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ফরাসি নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদে দেশে ফেরত পাঠানো হোক। ফ্রান্সসহ অনেক দেশ এই আটকের ঘটনাকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে এবং কূটনৈতিক পথে মুক্তির চেষ্টা চলছে।
তুরস্ক সরকার এই নৌযান আটকানোর ঘটনাকে ‘জঘন্য হামলা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবাধে চলাচল করা এই ত্রাণবাহী জাহাজকে আটকানো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং মানবিক সাহায্য বন্ধ করার অপপ্রয়াস। তুরস্ক ইসরায়েলের এ পদক্ষেপকে কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, গাজার উপকূলের দিকে যাত্রা শুরুর আগে বারবার তাদের সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রা চালিয়ে গেছে। বর্তমানে গাজা অঞ্চলে কঠোর সামুদ্রিক অবরোধ চালানো হচ্ছে, যা ইসরায়েল নিরাপত্তার স্বার্থে কঠোরভাবে রক্ষা করছে। তারা বলছে, এ ধরনের অভিযান তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।
‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ নামে একটি সংগঠন এই অভিযানের মূল উদ্যোক্তা। তারা গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে চলমান সংকট সম্পর্কে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিল। জাহাজটি ওষুধ, ময়দা, শিশুখাদ্য ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা বহন করছিল। ইসরায়েল ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ অভিযানের ওপর ‘উসকানিমূলক’ অভিযোগ এনেছে এবং এই ধরনের অভিযানগুলো বন্ধ করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
ইসরায়েল গত কয়েক বছরেও গাজার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করা বেশ কিছু মানবিক সহায়তা জাহাজ আটকিয়েছে। তাদের দাবি, এসব অভিযান নিরাপত্তা ও আইনের বিরুদ্ধে। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ এই অবরোধ ও আটককরণকে মানবিক সঙ্কট বাড়ানোর অভিযোগ করে আসছে।
১ জুন সিসিলির কাতানিয়া বন্দর থেকে ‘ম্যাডলিন’ নামের জাহাজটি গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। জাহাজটি প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার দূরে গাজার উপকূলে পৌঁছালে ইসরায়েলি নৌবাহিনী তা আটক করে। এরপর যাত্রীদের মোবাইল ফোন জব্দ করে এবং তাদের সাগরের পানিতে ফেলে দিতে বাধ্য করে।
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও নৌ-আইনের পরিপন্থী। বিশেষ করে শান্তিপূর্ণ মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টায় বাধা দেয়া আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিকতার লঙ্ঘন বলে মনে করছেন অনেকেই।
গাজার সংকটের মাঝে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা এবং ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হয়ে উঠল ‘ম্যাডলিন’ জাহাজ আটকানোর ঘটনায়। গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ জন মানবাধিকার কর্মীর এই আটকের ঘটনাটি কেবল মানবিক নয়, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে বিশাল প্রভাব ফেলেছে। এর প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নজর রেখেছে ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং গাজার মানবিক অবস্থা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ