
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বহুল আলোচিত বৈঠক আগামী ১৩ জুন সকালে অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। মঙ্গলবার (১১ জুন) লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। বৈঠকটি ঘিরে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক মহলে যেমন ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তেমনি অনেকেই একে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাব্য সুরের সূচনা হিসেবেও দেখছেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠেয় এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের জন্য কোনো নির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি (এজেন্ডা) নির্ধারণ করা হয়নি। তবে তিনি উল্লেখ করেন, বৈঠকে বাংলাদেশ সংক্রান্ত যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উঠে আসতে পারে।
তিনি বলেন, “তারেক রহমান এই মুহূর্তে বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতা এবং অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে উনারা যখন আলোচনায় বসবেন, তখন বাংলাদেশ নিয়ে যেকোনো প্রসঙ্গ আলোচনায় আসা খুব স্বাভাবিক।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব আরও বলেন, “এটি একটি উন্মুক্ত আলোচনা হবে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং আলোচিত ‘জুলাই সনদ’—এই তিনটি বিষয় আলোচনায় আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।”
‘জুলাই সনদ’ নামে পরিচিত একটি খসড়া নথি গত কিছুদিন ধরে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলে ঘুরছে, যেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য দলগুলোর মধ্যে একটি মধ্যপন্থার রূপরেখা দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সনদ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির মতামত জানতে চাওয়া হতে পারে। এছাড়া, আগামী জাতীয় নির্বাচন কীভাবে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে, সে বিষয়েও দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেস সচিব স্পষ্ট করে বলেন, “১৩ জুন সকালে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। তবে কী আলোচনা হবে, সেটা পুরোপুরি অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের উপর নির্ভর করছে। আমরা কেবলমাত্র যোগাযোগ ও সময়সূচি নিশ্চিত করেছি।”
তিনি বলেন, “এই বৈঠক কোনো প্রথাগত রাজনৈতিক সংলাপ নয়। এটি হলো দুই শীর্ষ ব্যক্তির মধ্যে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়, যার প্রভাব হতে পারে বড় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়।”
বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে, স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে। ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকটি ঘণ্টাখানেক স্থায়ী হতে পারে। উভয় পক্ষের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকের জন্য আলাদা করে কোনো মিডিয়া ব্রিফিং নির্ধারিত হয়নি, তবে বৈঠকের পরে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হতে পারে।
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের এই বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠকটি ঘিরে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক, কূটনীতিক ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। দেশের একটি বড় রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক আগামী রাজনৈতিক সংকট নিরসনে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
বিশেষ করে, যারা মনে করছেন বাংলাদেশে নির্বাচন ঘিরে এখনও সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি রয়েছে এবং রাজনৈতিক সমঝোতার সুযোগ আছে, তাদের দৃষ্টিতে এই বৈঠক নতুন আশার জন্ম দিতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরোধী দলীয় নেতাদের সঙ্গে সরকারি প্রতিনিধিদের বৈঠক বরাবরই আলোচিত ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট কিছুটা ব্যতিক্রম। কারণ, অধ্যাপক ইউনূস প্রথমবারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন, এবং তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করলেও এখনও বিএনপির নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এই দুই পরিপূর্ণ বিপরীত ভূমিকায় থাকা নেতার মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক রাজনীতিতে নতুন ধারা তৈরি করতে পারে।
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের এই বৈঠক কেবল দুটি ব্যক্তির মধ্যকার মতবিনিময় নয়, বরং এটি হতে পারে বাংলাদেশের আগামী রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণের একটি সম্ভাব্য সূচনা। এই আলোচনার ফলাফল কতটা তাৎপর্যপূর্ণ হবে, তা এখনই বলা না গেলেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি ২০২5 সালের নির্বাচন ও রাজনৈতিক সমঝোতার পটভূমিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ