
ছবি: সংগৃহীত
কনমেবল অঞ্চল থেকে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের লড়াইয়ে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়ার মধ্যকার ম্যাচে উত্তেজনার শেষ ছিল না। বুয়েনোস আইরেসের ঐতিহাসিক মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে একদিকে ছিল গত বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা, অন্যদিকে সদ্য উত্থানশীল কিন্তু দৃঢ়চেতা কলম্বিয়া। দুই দলের প্রথম দেখায় জয়ের দেখা পেয়েছিল কলম্বিয়া, আর এবার ফিরতি লড়াইয়ে শুরুর দিকেই লিওনেল স্কালোনির দল পড়ে যায় চাপে।
ম্যাচের শুরুতে অবশ্য আর্জেন্টিনা বেশ আগ্রাসীভাবেই মাঠে নামে। অধিনায়ক লিওনেল মেসি ছিলেন শুরুর একাদশে এবং প্রথম কয়েক মিনিটে আক্রমণ সাজিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখেন। তৃতীয় মিনিটেই একটি আক্রমণে বল নিয়ে ডান দিক দিয়ে এগিয়ে যান মেসি, পেনাল্টি বক্সে ঢুকেও একটি সম্ভাব্য সুযোগ তৈরি করেন, তবে শেষ মুহূর্তে কলম্বিয়ার রক্ষণ সেটি ঠেকিয়ে দেয়।
তবে ধীরে ধীরে ম্যাচের রাশ ঘুরিয়ে নেয় কলম্বিয়া। প্রতি আক্রমণে বারবার আর্জেন্টিনার রক্ষণ ভেদ করতে থাকে তারা। এমন একটি আক্রমণ থেকেই আসে ম্যাচের প্রথম গোলটি। ২৪ মিনিটে আর্জেন্টিনার কর্নার ঠেকিয়ে দ্রুত প্রতি আক্রমণে উঠে যায় কলম্বিয়া। কেভিন কাস্তানো বল বাড়ান মাঝমাঠে থাকা লুইস দিয়াজের দিকে। বার্সেলোনা ও লিভারপুলে আলোচিত এই তরুণ ফরোয়ার্ড বাঁ দিক দিয়ে প্রবল গতি নিয়ে এগিয়ে যান, পেছনে পড়ে থাকেন তিন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার। এরপর দুর্দান্ত দক্ষতায় জায়গা বের করে এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে পরাস্ত করে বল পাঠান জালে।
১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় কলম্বিয়া।
গোল খাওয়ার পর কিছুটা নড়েচড়ে বসে আর্জেন্টিনা। তবে খেলার গতি তখনও প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রণে। যদিও ৩০ মিনিটে একবার বল জালে জড়িয়েছিল আর্জেন্টিনা। রদ্রিগো দে পলের পাস থেকে নিকো গনজালেস বল ঠেলে দেন জালের ভেতর। মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল সমতা ফিরে পেয়েছে স্বাগতিকরা। তবে রিপ্লেতে দেখা যায়, গনজালেস অফসাইডে ছিলেন। ফলে বাতিল হয়ে যায় গোলটি। বিরতিতে যেতে হয় পিছিয়ে থেকেই।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই আর্জেন্টিনা আরও বেশি আগ্রাসী হতে চেয়েছিল। কিন্তু বারবার বল হারানো, মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং ভুল পাসিংয়ের কারণে একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া হয়। ৬৩ মিনিটে গোলের একটি নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করেন এনজো ফের্নান্দেজ। খালি পোস্ট পেয়েও ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি তিনি।
তার পরপরই ঘটে আরও বড় বিপর্যয়। ৬৭ মিনিটে কলম্বিয়ার মাঝমাঠার কেভিন কাস্তানোর মাথায় বুট দিয়ে আঘাত করেন এনজো। সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে তাকে মাঠ থেকে বের করে দেন রেফারি। এতে ১০ জনের দলে পরিণত হয় আর্জেন্টিনা। এক গোল পিছিয়ে থাকা অবস্থায় একজন কম নিয়ে খেলাটা যে কতটা কঠিন, তা বলাই বাহুল্য।
এই পরিস্থিতিতে অনেকেই হয়তো ভাবছিলেন, হয়তো লিওনেল মেসিই আবার উদ্ধারকর্তার ভূমিকায় নামবেন। কিন্তু কোচ স্কালোনি এবার ভিন্ন কৌশল নেন। তিনি ম্যাচের ৭৭ মিনিটে তুলে নেন মেসিকে। এমন সিদ্ধান্তে কিছুটা চমকে যায় গ্যালারি, যদিও স্কালোনি আগেই সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন—আর্জেন্টিনা এখন আর শুধুমাত্র মেসির ওপর নির্ভর করে না।
মেসিকে তুলে নেওয়ার দুই মিনিট পরই যেন তার কথারই প্রতিফলন দেখা যায় মাঠে। ৭৯ মিনিটে একটি থ্রো ইন থেকে বল পেয়ে থিয়াগো আলমাদা বক্সের ডান দিক দিয়ে ঢুকে পড়েন। দারুণ পায়ের কাজের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ রক্ষণ বিভ্রান্ত করে কোণাকুণি শটে বল পাঠান জালে। সমতা ফিরে পায় আর্জেন্টিনা।
গোল করার পর আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় স্বাগতিক দল। তবে একই সঙ্গে সতর্ক থাকতেও হয় তাদের। কারণ, ১০ জন নিয়ে রক্ষণ সামলানো সহজ ছিল না। ৮৬ মিনিটে এমন একটি আক্রমণে আবারও প্রতিপক্ষ গোলের কাছে পৌঁছে যায়, কিন্তু কলম্বিয়ার একটি শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ফলে রক্ষা পায় আর্জেন্টিনা।
শেষ পর্যন্ত দুই দল ১-১ সমতায় থেকে ম্যাচ শেষ করে। এতে করে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কলম্বিয়ার বিপক্ষে জয় অধরাই থেকে গেল আর্জেন্টিনার জন্য। তবে একজন কম নিয়ে ম্যাচ ড্র করাটাও মোটেই ছোট কোনো অর্জন নয়, বিশেষ করে প্রতিপক্ষ যখন কলম্বিয়ার মতো দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দল।
ম্যাচ শেষে স্কালোনি বলেন, “এই দলটা কেবল মেসির ওপর ভরসা করে না, এটা আমরা দেখাতে চেয়েছি। আমাদের তরুণরাও এখন চাপের সময় উঠে দাঁড়াতে পারে। থিয়াগো আলমাদা সেটার দারুণ উদাহরণ।”
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের লম্বা লড়াইয়ে এই ড্রও কোনো দলকেই হয়তো খুব একটা পিছিয়ে দেবে না। তবে আর্জেন্টিনার জন্য এটিকে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার ম্যাচ বলাই যায়, যেখানে দলগতভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা তারা আবারও প্রমাণ করল।
বাংলাবার্তা/এমএইচ