
ছবি: সংগৃহীত
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে কমনওয়েলথ। সংস্থাটির মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া শার্লি আয়োরকর বচওয়ে সম্প্রতি লন্ডনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে এই আগ্রহের কথা জানান। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, বাংলাদেশের প্রয়োজন হলে কমনওয়েলথ সাংবিধানিক সংস্কারসহ রাজনৈতিক কাঠামোগত উন্নয়নে পাশে থাকতে প্রস্তুত।
বৈঠকে বচওয়ে বলেন, “বাংলাদেশের প্রয়োজন হলে আমরা সহায়তা প্রদান করতে পেরে খুশি হব, বিশেষ করে সাংবিধানিক সংস্কারে সমর্থন প্রয়োজন হলে।” তার এই বক্তব্য আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সংস্কারের প্রতি আগ্রহ এবং নির্বাচনের আগে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ গঠনের আহ্বান হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
কমনওয়েলথ মহাসচিব আরও জানান, গণতন্ত্র এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সদস্য দেশগুলিকে সমর্থন করাকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক সংলাপ, শক্তিশালী নির্বাচন ব্যবস্থা এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান গঠনে তারা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পাশে থাকতে চায়।
ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কমনওয়েলথের মহাসচিব শুধুমাত্র রাজনৈতিক সহায়তা নয়, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “কমনওয়েলথ বর্তমানে ২.৭ বিলিয়ন মানুষের প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৮৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা আগামী বছরগুলোতে এই পরিমাণকে কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়নে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছি।”
তিনি জানান, সংস্থার আরেকটি অগ্রাধিকার হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে সহায়তা করা। বিশেষ করে ছোট ও ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশগুলিকে জলবায়ু অর্থায়নে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে তারা কাজ করছে।
এই বৈঠকে ড. ইউনূস কমনওয়েলথ মহাসচিবকে খেলাধুলার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এবং এর মাধ্যমে যুবসম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “খেলাধুলা কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি সামাজিক দিকনির্দেশনা হতে পারে। আমরা ক্রীড়াবিদদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করছি। খেলাধুলা কমনওয়েলথকে স্মরণীয় করে রাখার একটি ভালো উপায় হতে পারে।”
ড. ইউনূসের প্রস্তাবের জবাবে মহাসচিব বচওয়ে জানান, তারা এই মাসেই ঢাকায় একটি যুব কর্মসূচির আয়োজন করতে যাচ্ছেন, যার মাধ্যমে তরুণদের উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হবে। তিনি জানান, কমনওয়েলথ জনসংখ্যার অন্তত ১.৫ বিলিয়ন মানুষ তরুণ, এবং তাদের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পথ খুলে দিতে নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে কমনওয়েলথ বৃত্তি কর্মসূচিও পুনর্গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ এবং যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর আগ্রহ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতি সমর্থনের একটি পরিষ্কার বার্তা বহন করে। রাজনৈতিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক অনুশীলন ও যুব সম্পৃক্ততা বাড়াতে কমনওয়েলথের এমন আগ্রহ শুধু রাজনৈতিক সহায়তা নয়, বরং বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অঙ্গনে আরও শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে তুলে ধরার সুযোগও এনে দিতে পারে।
এই সফর এবং আলোচনার ফলাফল ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও কমনওয়েলথের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ