
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী অভিযোগ করেছেন, দেশের করোনা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, সরকার জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং এই অব্যবস্থাপনার দায় সরকারকেই নিতে হবে। বুধবার (১১ জুন) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, “দেশজুড়ে করোনা ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। কিন্তু সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। দেশের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। এমনকি ডেঙ্গু শনাক্তের কীট পর্যন্ত অনেক এলাকায় সংকট রয়েছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড় বাড়ছে, রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। এমন অবস্থায় সরকারের উচিত ছিল তৃণমূল পর্যায় থেকেই জরুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কিন্তু তারা বরাবরের মতো জনগণকে বিপদের মুখে ফেলে রেখে উন্নয়নের বুলি আওড়াচ্ছে।”
রিজভীর ভাষ্য অনুযায়ী, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে, কেউ কেউ মৃত্যুবরণও করছেন। তিনি বলেন, “ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি করপোরেশনগুলোও কার্যকর ভুমিকা পালন করছে না। মশক নিধন কার্যক্রম কেবল কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। কার্যত কোন প্রতিরোধ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “করোনার ক্ষেত্রে টিকা কার্যক্রম ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও কোনো স্বচ্ছতা নেই। এখন যেহেতু আবার নতুন ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, সেখানে সচেতনতা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব আরও বেড়েছে। কিন্তু তারা দায়িত্বহীনভাবে নীরবতা পালন করছে।”
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সুরক্ষা নয়, গণতন্ত্র নিয়েও সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। গণতন্ত্রকে তারা বন্দি করে রেখেছে। ভোটাধিকার হরণ, বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন—সবকিছু মিলিয়ে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”
এ প্রসঙ্গে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আসন্ন বৈঠকের কথাও উল্লেখ করেন। রিজভী বলেন, “আগামী ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটি আমাদের দলের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই বৈঠকের মাধ্যমে আমরা দেশের ভবিষ্যত রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার রূপরেখা চূড়ান্ত করব।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণের দাবি মেনে নিয়ে এই সরকারের পদত্যাগ এবং একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন এখন সময়ের দাবি। দেশের মানুষ তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। সেই লক্ষ্যে বিএনপি রাজনৈতিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষে রিজভী আবারও সরকারের উদ্দেশে আহ্বান জানান যে, “করোনা ও ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিকে অবহেলা করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার দিন শেষ হয়ে গেছে। সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর স্বাস্থ্য নীতি, পর্যাপ্ত বরাদ্দ, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা সংস্কার এবং তৃণমূল পর্যায়ে দ্রুত প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “সরকারের নীতিহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্যখাত আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জনগণের জীবন রক্ষার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। অন্যথায় জনগণই তাদের জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে।”
এই সংবাদ সম্মেলন থেকে স্পষ্ট হয়, বিএনপি শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কেও জনগণের পক্ষ থেকে সরব ভূমিকা রাখতে চাইছে। পক্ষান্তরে, রিজভীর অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কী পদক্ষেপ নেয় বা আদৌ কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় কিনা, তা এখন দেখার বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ