
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়াকড়ি অভিবাসন আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে দেশজুড়ে চলমান আন্দোলনের উত্তাপে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে জারি করা হয়েছে কারফিউ। শহরের মেয়র কারেন বাস স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি শহরে স্থানীয় জরুরি অবস্থাও জারি করেছেন।
মেয়র কারেন বাস জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে পরদিন বুধবার (১১ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত এই কারফিউ কার্যকর থাকবে। বিশেষভাবে কারফিউ প্রযোজ্য হবে শহরের কেন্দ্রস্থলের ১ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে, যেখানে গেল শুক্রবার থেকে টানা বিক্ষোভ চলছে। সেই অঞ্চলজুড়ে সহিংসতা, ভাঙচুর ও লুটপাটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের মোট আয়তন প্রায় ৫০০ বর্গমাইল (২,২৯৫ বর্গ কিলোমিটার), তার একটি ক্ষুদ্র অংশেই এই কারফিউ কার্যকর হলেও এর তাৎপর্য অনেক।
কারফিউ জারির ঘোষণায় মেয়র জানান, বিক্ষোভের নামে সহিংসতা লাগামহীন হয়ে উঠছে এবং ইতোমধ্যে শহরের কমপক্ষে ২৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাটের শিকার হয়েছে। তাঁর কথায়, “আমরা চরম এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের নামে যেভাবে সহিংসতা ও সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে, তা আর মেনে নেওয়া যায় না।”
কারা কারফিউ থেকে ছাড় পাবেন?
লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ প্রধান জিম ম্যাকডোনেল জানান, কারফিউ নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কারফিউ চলাকালীন সময়েও যাঁরা রাস্তায় চলাফেরা করতে পারবেন, তাঁরা হলেন: নির্ধারিত এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা, গৃহহীন জনগণ, প্রশংসাপত্রপ্রাপ্ত মিডিয়া কর্মীরা, জননিরাপত্তা ও জরুরি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তবে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “শনিবার থেকে শহরে বেআইনি এবং বিপজ্জনক আচরণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সহিংসতা, ভাঙচুর ও দাঙ্গার মতো ঘটনাগুলো গোটা শহরজুড়ে জননিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার লক্ষ্যে এই কারফিউ জারি একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।”
অভিবাসন আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, সহিংসতার রূপ নিচ্ছে
গত কয়েকদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরের মতো লস অ্যাঞ্জেলেসেও বিক্ষোভ চলছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন সংক্রান্ত নীতিমালার বিরুদ্ধে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যে কঠোর নীতি প্রয়োগ করছেন, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। তবে প্রাথমিকভাবে এই বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকলেও, শহরের কিছু অংশে পরবর্তীতে তা সহিংস রূপ নেয়।
স্থানীয় গণমাধ্যম ও এপি (Associated Press)-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ দোকানপাটে ভাঙচুর চালিয়েছে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করেছে। এমনকি পুলিশ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে পাথর ও বোতল ছুঁড়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শহরের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন, সম্ভাব্য সামরিক মোতায়েন
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের প্রস্তাবও আলোচনায় রয়েছে। বিক্ষোভ যেন আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া, যারা কারফিউ আইন ভঙ্গ করবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতি লস অ্যাঞ্জেলেসের জন্য নতুন কিছু নয়। অতীতে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড ও রডনি কিং ঘটনার সময়ও শহর জুড়ে এমন সহিংস বিক্ষোভ ও কারফিউ দেখা গেছে। তবে এবার এটি আরও জটিল হয়ে উঠছে কারণ এটি সরাসরি হোয়াইট হাউজের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই প্রতিরোধ যদি সহিংস রূপ নেয়, তাহলে শুধু লস অ্যাঞ্জেলেস নয়, পুরো যুক্তরাষ্ট্রেই রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও ঘনীভূত হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সূত্র: এপি (Associated Press)
বাংলাবার্তা/এমএইচ