
ছবি: সংগৃহীত
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামে এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় বাবা-মেয়ে পুকুরের পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতরা হলেন মৃত খুর্শীদ আলীর পুত্র বাবুল আহমদ (৫৮) এবং তার মেয়ে হালিমা আক্তার (১৮)। হালিমা ঢাকা শহরের প্রখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাবা বাবুল আহমদ তার ছোট মেয়ে হালিমাকে সাতার শেখানোর জন্য পুকুরে নিয়ে যান। বাবা-মেয়ের মধ্যে ভালোবাসা ও যত্নের নিদর্শন হিসেবে বাবা নিজের মেয়ে কে সাতার শেখানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এক পর্যায়ে তারা পানির গভীরে চলে যান এবং আর ফিরে আসতে পারেননি। তাদের নিখোঁজ দেখে আশেপাশের লোকজন চিৎকার শুরু করলে দ্রুত স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা পানি থেকে বাবা-মেয়েকে উদ্ধার করে কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর থেকে হামিদপুর গ্রামের পরিবার ও প্রতিবেশীরা গভীর শোকাহত হয়েছেন। নিহত বাবুল আহমদের ছোট ভাই বদরুল ইসলাম এই দূরদর্শী দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বাবা-মেয়ের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর খবর শুনে পরিবার এবং এলাকাবাসী এক ধরনের শোকগভীর পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে। সকলেই এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
জুড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল হক বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না আসায় মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ এই মর্মান্তিক ঘটনায় তদন্ত সম্পন্ন করেছে এবং দুর্ঘটনাটিকে প্রাকৃতিক মৃত্যুর ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে।
স্থানীয় সমাজকর্মী এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনার মাধ্যমে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ ও সঠিক প্রশিক্ষণের গুরুত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, পানিতে সাঁতার শেখানো গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেটা অবশ্যই অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে করতে হবে। অনভিজ্ঞভাবে কিংবা অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে পানি সংস্পর্শে গেলে জীবনের জন্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
হালিমা আক্তার একজন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশোনা করছিলেন এবং চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, হালিমা পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ও সফল হতে চেয়েছিল। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তার শিক্ষাজীবন হঠাৎই শেষ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের সকলেই গভীর শোক ও হতাশায় রয়েছেন।
এই দুঃখজনক ঘটনায় সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতি নিরাপত্তা ও সতর্কতার গুরুত্ব একবার পুনরায় উদ্ভাসিত হলো। বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের পানির সাথে সম্পর্কিত কার্যকলাপে সতর্ক থাকা, সাঁতার শেখার সময় অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা এবং পুকুর, নালা, খাল ও অন্যান্য জলাশয় থেকে দূরে থাকার বিষয়গুলো ব্যাপক সচেতনতার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল।
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বাবুল আহমদ ও তার কিশোরী কন্যা হালিমা আক্তারের পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনেছে। একসঙ্গে সাতার শেখার প্রয়াসে বাবা-মেয়ের প্রাণ হারানো এই ঘটনা শুধু তাদের পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্য এক শোকের বার্তা। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এবং মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা সময়ের দাবি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ