
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ কয়েকটি অঞ্চলে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশ সরকার বিশেষ সতর্কতা জোরদার করেছে। করোনার এই নতুন উপধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি করোনার নতুন ধরন থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পাঁচটি মূল নির্দেশনা মেনে চলার কথা উল্লেখ করেন, যা পুরো দেশের শিক্ষাঙ্গনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাঁচ দফা নির্দেশনা
প্রথমত, করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় নিয়মিত এবং সঠিকভাবে হাত ধোয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। হাত ধোয়ার সময় অবশ্যই কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি ব্যবহার করতে হবে। এই সাধারণ কিন্তু কার্যকরী পদ্ধতি করোনাভাইরাস ও অন্যান্য জীবাণু থেকে মুক্ত থাকার অন্যতম সুরক্ষা।
দ্বিতীয়ত, জনসমাগম থেকে নিজেকে দূরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। যেখানে অনেক মানুষ জমায়েত হয়, সেসব জায়গায় আসা-যাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। একই সঙ্গে বাইরে বের হলে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে এক প্রকার ঢাল হিসেবে কাজ করে।
তৃতীয়ত, আক্রান্ত ব্যক্তি বা সন্দেহভাজন কারো কাছ থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা করোনার সংক্রমণ সীমিত করার একটি অন্যতম কৌশল।
চতুর্থত, অপরিষ্কার হাত দিয়ে নিজের চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই তিনটি জায়গা শরীরে ভাইরাস প্রবেশের প্রধান পথ হিসেবে কাজ করে।
পঞ্চমত, হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে। এতে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যান্য নির্দেশনা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেশের সকল আন্তর্জাতিক প্রবেশপথে আগত যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা নিশ্চিত করতে থার্মাল স্ক্যানার ও ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক, গ্লাভস ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) মজুদ রাখতেও বলা হয়েছে।
কোনো ব্যক্তির শরীরে করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তাকে অবিলম্বে নিজ ঘরে অবস্থান করতে বলা হচ্ছে এবং গুরুতর অবস্থায় দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতি ও দায়িত্বশীলতা জরুরি
এই সংকটপূর্ণ সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নের ব্যাপারে সম্পূর্ণ দায়িত্বশীল হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়মিত হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান ও পানি সরবরাহ, মাস্ক পরিধান নিশ্চিতকরণ, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এছাড়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যান্য নির্দেশনা মানার বিষয়েও কঠোর নজরদারি রাখতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা
করোনা মহামারির নতুন ধরণ দেশের সীমানায় প্রবেশের ঝুঁকি থাকায় সরকারের সতর্কতা বাড়ানো খুবই সময়োপযোগী। আন্তর্জাতিক প্রবেশপথগুলোতে বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করা ছাড়া, জনসমাগম কেন্দ্রগুলো যেমন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাস্থ্যবিধি মানা অপরিহার্য।
বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি এখনো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তাই সংক্রমণ রোধে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতা প্রয়োজন। বিশেষ করে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবিধি মানা বাধ্যতামূলক।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য দেওয়া এই পাঁচ দফা নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অপরিষ্কার হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ থেকে বিরত থাকা ও হাঁচি-কাশির সময় সঠিক রকম মুখ ঢেকে রাখা—এই গুলোই করোনার নতুন ধরন থেকে সুরক্ষা দেয়ার অন্যতম হাতিয়ার।
সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসরণ করে সচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তার অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে। করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষায় এই জোরদার সতর্কতা এক্ষুণি মেনে চলা না হলে পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
সবাই মিলে সচেতনতার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। তাই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং এই নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, যেন স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারি এবং শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ