
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল আজহার পবিত্র উৎসবের আনন্দ ও প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোকে স্মরণ করে কর্মজীবী মানুষ এখন ধীরে ধীরে ফিরছেন রাজধানী ঢাকায়। রোববার (৮ জুন) সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রেন ও বাসযোগে ঢাকায় ফিরে আসার ঢল নামতে শুরু করেছে। তবে একই সঙ্গে এখনও অনেক মানুষ ঈদের বাকি ছুটি কাটাতে বাড়ির পথে রওনা দিচ্ছেন। অর্থাৎ, ঈদের পরদিন শহরে মানুষের চলাচল ও যাতায়াত একদিকে ঘন হয়ে উঠেছে আবার অন্যদিকে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন গ্রাম-গঞ্জে।
শনিবার (৭ জুন) পালিত হয়েছে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। সারা দেশে ঈদের দিন ও তার আগে হাজার হাজার মানুষ ছুটি কাটাতে নিজেদের গৃহস্থালি ও গ্রামীণ পরিবেশে ফিরে যান। কেউ কেউ হয়তো পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শহরেই ছিলেন। কিন্তু ঈদের প্রধান দিন পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে ঢাকায় ফিরতি মানুষের ঢল।
রাজধানীর প্রধান রেলওয়ে স্টেশন কমলাপুর থেকে দেখা গেছে, সকাল থেকে ট্রেন ও বাসে করে মানুষের চলাচল যথেষ্ট বেড়েছে। অনেক যাত্রী ঢাকায় ফিরলেও সেই সঙ্গে অনেকে এখনও নিজেদের গন্তব্যগ্রাম বা বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন। বিশেষ করে যারা ঈদুল আজহার সময় ঢাকায় থেকে পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারেননি, তাঁরা ঈদের পরের দিন বা পরবর্তী কয়েকদিনে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞ ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত কর্মব্যস্ততার কারণে যারা ঈদের সময় রাজধানীতে থেকে কাজ করেছেন, তারা এখন ফিরছেন। একই সঙ্গে দীর্ঘ দিনের ছুটির সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকেই বাড়ি যাচ্ছেন, যেখানে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মিলিত হওয়া ও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের একজন যাত্রী জানান, যাত্রী সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় ট্রেন যাত্রা খুব স্বাচ্ছন্দ্যের হয়ে উঠেছে। এতে করে দীর্ঘ যাত্রাপথও অনেকটাই ঝামেলামুক্ত হচ্ছে। একই অবস্থা বাস পরিবহনেও দেখা গেছে। বাসগুলো তুলনামূলক কম ভিড়ের কারণে আরামদায়ক যাত্রার সুযোগ দিয়ে চলেছে।
ঈদের দ্বিতীয় দিন দেশের প্রধান সড়ক, রেলপথ ও আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলেও মানুষের চলাচল বাড়তি চাপে পড়েছে। ঢাকার প্রধান ও বহির্গামী রাস্তাগুলোতে সকাল থেকেই যানজটের কিছুটা শিথিলতা দেখা গেলেও সারাদিন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মানুষ চলাচল। রাজধানী ছাড়ার পাশাপাশি ঢাকায় আসাও মুখ্য পর্ব হিসেবে গড়ে ওঠে। ট্রেন স্টেশন, বাস টার্মিনাল, সড়কপথে মানুষের আসা-যাওয়া বাড়তে থাকে।
সরকারি ও বেসরকারি পরিবহন কর্তৃপক্ষও ঈদের দিন ও পরদিন বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল যাতে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। যাত্রীদের মধ্যে বেশির ভাগই জানিয়েছেন, যাত্রা ঝামেলামুক্ত হওয়ায় তারা অনেকটা স্বস্তিতে আছেন।
এতদিনে ঈদুল আজহার ছুটি দেশের সাধারণ মানুষ ও কর্মজীবীদের জন্য বড় একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন কাজের তাড়া কাটিয়ে ছুটির এই দিনগুলোতে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটানো তাদের কাছে অপরিসীম মূল্যবান। তাই ঈদ পালন শেষে ঈদের বাকি সময়টুকু নিজেদের বাড়ি-দুইয়ে কাটাতে প্রত্যেকের মধ্যে প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকে।
ঢাকায় ফিরতি মানুষের এই ঢল আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, অনেকেই আবার কর্মস্থলে যোগদান বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য কাজের জন্য ঢাকায় ফিরে আসবেন।
দেশের বৃহত্তম শহর ঢাকা, যেখানে কাজের জন্য বিপুল জনসংখ্যা থাকে, সেখানে ঈদ পরবর্তী মানুষের যাতায়াত অনেক বড় ধরনের পরিবর্তনের সাক্ষী হয়। ঈদের দিনগুলোতে ঢাকায় জনসংখ্যা কিছুটা কমে যায়, কারণ মানুষ ছুটিতে বাড়ি চলে যায়। তবে ঈদের পরপরই আবার কর্মজীবী ও শিক্ষার্থী সহ নানা শ্রেণির মানুষ শহরে ফিরে আসে।
সরকার ও পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে এই সময়টা বিশেষ গুরুত্বের অধীনে থাকে যাতে যাতায়াত ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ থাকে। পাশাপাশি শহরে ফিরতি মানুষের চলাচল ও নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
ঈদুল আজহার উৎসব পালনের আনন্দ এখনও ঢাকার রাস্তাঘাট ও পরিবহন কেন্দ্রে চিত্রিত হচ্ছে। একদিকে ঈদ উদযাপন শেষে প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতি নিয়ে কর্মজীবীরা শহরে ফিরছেন। অন্যদিকে, ঈদের বাকি সময় কাটাতে গ্রামের পথে রওনা দিচ্ছেন অনেকে। এই দুই পরস্পরবিরোধী প্রবণতার মধ্য দিয়ে দেশের বৃহত্তম নগরী ঢাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক গতিশীলতা নতুন রূপ নিয়ে সামনে এগিয়ে চলছে। আগামী দিনগুলোতে এই চলাচল অব্যাহত থাকবে এবং তা দেশের জীবনযাত্রার একটি অনিবার্য অংশ হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ