
ছবি: সংগৃহীত
করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার আবারও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কোভিড-১৯ এর নতুন উপসর্গ ও সংক্রমণের খবর সামনে আসায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জনসমাগমপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থায় সংক্রমণ রোধে নতুন করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
এরই অংশ হিসেবে দেশের অন্যতম ব্যস্ত গণপরিবহন ঢাকা মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) যাত্রীদের প্রতি মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছে। সোমবার (৯ জুন) প্রতিষ্ঠানটির পাঠানো এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
ডিএমটিসিএল-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও উপসচিব মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে— করোনা সংক্রমণ এড়াতে মেট্রোরেলে ভ্রমণকারী প্রতিটি যাত্রীকে মাস্ক পরার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। যেহেতু প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী মেট্রোরেল ব্যবহার করে রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিলের মধ্যে যাতায়াত করছেন, সেহেতু এই গণপরিবহন ব্যবস্থায় সংক্রমণের আশঙ্কা যথেষ্ট বলেই মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
এজন্য শুধু যাত্রীদের নয়, সংবাদমাধ্যম ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও স্ক্রলে এই বার্তা প্রচারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে সর্বসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, “যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং জনস্বার্থ বিবেচনায় এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।”
ঢাকা শহরের অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ গণপরিবহন রুট হলো মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬, যা উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বিস্তৃত। রাজধানীর কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে এই মেট্রোরেল প্রতিদিনই লাখো মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে।
ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, এমন বিশালসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এ কারণে মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, প্রয়োজনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি নির্দেশনা অনুসরণে কঠোরতা আনা হয়েছে।
ডিএমটিসিএলের এই নির্দেশনার পাশাপাশি রেলপথ মন্ত্রণালয়ও একই ধরনের সতর্কবার্তা জারি করেছে। ঈদুল আজহার পরবর্তী ফিরতি ট্রেন যাত্রায় মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে স্টেশন ও ট্রেনের ভেতরের ভিড়পূর্ণ পরিবেশে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকায়, স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, দেশের যেকোনো সমাগমপূর্ণ স্থানে যাওয়া এবং গণপরিবহন ব্যবহারের সময় বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের সতর্ক থাকা উচিত। এমনকি তাঁদের এসব জায়গা এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর থেকে কয়েক দফায় সংক্রমণের হার তীব্রভাবে বেড়ে জনস্বাস্থ্য সংকট তৈরি হয়েছিল। প্রতিটি সংকটপর্বে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছিল—যার মধ্যে ছিল মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বারবার হাত ধোয়া এবং জনসমাগম এড়ানো।
তবে সময়ের সাথে সাথে সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ায় সেইসব কঠোরতা অনেকটাই শিথিল হয়। এখন আবার দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নতুন করে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ হার যদি ক্রমাগত বাড়ে, তাহলে আবারও গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়বে দেশ। সেই বিপর্যয় ঠেকাতে প্রয়োজন ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা। মাস্ক পরিধান একটি সহজ অথচ কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা সংক্রমণ ছড়ানো বা আক্রান্ত হওয়া—উভয় দিক থেকেই সুরক্ষা দেয়।
এই বিবেচনায় মেট্রোরেল, ট্রেনসহ গণপরিবহনের যাত্রীদের মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ একান্ত অপরিহার্য বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। ঢাকার মতো জনবহুল শহরে মেট্রোরেল, বাস বা ট্রেন—যেকোনো গণপরিবহন ব্যবস্থায় প্রতিদিন লাখো মানুষের চলাচল হয়। সেখানে সামান্য অসাবধানতা পুরো সমাজে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে।
এই বাস্তবতায় ডিএমটিসিএলের মাস্ক পরার অনুরোধ কোনো আমলযোগ্য আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি সময়োচিত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এই নির্দেশনা মানা শুধু ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্যই নয়, বরং পরিবারের সদস্য ও আশপাশের লোকজনকেও ঝুঁকিমুক্ত রাখার একটি দায়িত্ব।
সবশেষে, মেট্রোরেল ব্যবহারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ মানেই হলো—আপনি নিজেও সচেতন, এবং আপনার চারপাশের মানুষদের প্রতিও দায়িত্বশীল।
বাংলাবার্তা/এমএইচ