ছবি: বাংলাবার্তা
বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যমে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু সময়ের অন্যতম চর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে মনে করছে ট্রান্সজেন্ডার আর তৃতীয় লিঙ্গ একই। এ বিষয়ে কথা হয় ইসলামিক স্কলার, লেখক, গবেষক মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমীর সাথে। তাঁর সাথে কথা বলেন বাংলা বার্তার বিশেষ প্রতিনিধি মুহাম্মদ জাকারিয়া হারুন।
বাংলা বার্তা : ট্রান্সজেন্ডার ও তৃতীয় লিঙ্গ কি একই?
মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী : মানুষ প্রধানত দুই প্রকার, নারী ও পুরুষ। তাদের ছাড়া তৃতীয় আরেকটি লিঙ্গ রয়েছে যাদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ বলা হয়। আরবিতে তৃতীয় লিঙ্গকে খুনসা বলা হয়। নারী, পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গের শারীরিক পার্থক্য আমাদের জানা। আর ট্রান্সজেন্ডার হলো ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের লিঙ্গ পরিববর্তন করা। তদ্রূপ লিঙ্গ পরিবর্তন ছাড়া কেবল মনে মনে ইচ্ছা পরিবর্তন করলেও ট্রান্সজেন্ডার হবে। এই মতের প্রবক্তারা বলে বেড়াচ্ছে, শরীর নয়, মনই ব্যক্তির আসল লিঙ্গ-পরিচয়। অর্থাৎ একজন পুরুষের যদি মনে হয় সে নারী, তাহলে সে নারী। আবার একজন নারীর যদি মনে হয় সে পুরুষ, তাহলে সে পুরুষ।
তারা আরও দাবি করে- ডাক্তারের সাহায্যে তাদের মনের রূপকে বাস্তবেই রূপান্তর করা সম্ভব। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে; তথাকথিত লিঙ্গ পরিবর্তন তথা সার্জারির মাধ্যমে কেউ আসলে পুরুষ থেকে নারী বা নারী থেকে পুরুষ হয় না। মূলত এগুলো এক ধরনের কসমেটিক সার্জারি। এ ধরনের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শুধু বাহ্যিকভাবে কিছু পরিবর্তন আনা যায়, সৃষ্টিগত লিঙ্গের কোনো পরিবর্তন করা যায় না।
বাংলা বার্তা: ট্রান্সজেন্ডার সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী : ইসলামে জেন্ডার চেঞ্জ করা তো দূরের কথা, নারীকে পুরুষের এবং পুরুষকে নারীর বেশ ধারণ করতেই কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অভিসম্পাত করেছেন এবং সে (শয়তান) বলেছে, আমি তোমার দাসদের এক নির্দিষ্ট অংশকে (নিজের দলে) গ্রহণ করবই এবং তাদের পথভ্রষ্ট করবই। তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই। আমি তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই এবং তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। আর যে আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, নিশ্চয় সে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৮-১১৯)।
এ আয়াতে বলা হয়েছে, শয়তান মানুষকে সৃষ্টি বিকৃত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। তাই এটা সম্পূর্ণ হারাম।
হাদিসেও এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করা হয়েছে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটায় তাদের অভিসম্পাত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবীজি সা. এমন সব নারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা অঙ্গে উল্কি আঁকে ও অন্যকে দিয়ে উল্কি আঁকায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়ে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৭৮২)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, নবীজি সা. পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন। (মিশকাত : হাদিস নম্বর ৪৪২৯)।
বাংলা বার্তা: তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী: ট্রান্সজেন্ডার ও তৃতীয় লিঙ্গ এক জিনিস নয়। তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া হলো সৃষ্টিগত। সেখানে তাদের কোনো ইচ্ছা নেই। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির সেরা জীবের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। মূলত নারী-পুরুষের বাইরে আল্লাহর সৃষ্টি আরেকটি লিঙ্গ বৈচিত্রের মানবধারা এই তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, তিনি আল্লাহ মাতৃগর্ভে তোমাদেরকে যেমন ইচ্ছা তেমন রূপ দেন...( সুরা আল ইমরান, আয়াত : ৬)। তাই তাদের অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই ইসলামে। ইসলামী শরীয়তে মিরাছ তথা সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে তাদের জন্য পরিষ্কার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
তৃতীয় লিঙ্গ নির্ধারণে হযরত আলী রা. রাসুল (সা.) এর কাছে প্রসূত বাচ্চা পুরুষ-নারী নির্ধারণ করতে না পারলে তার বিধান কী জিজ্ঞাসা করলেন। নবীজি সা. জবাব দিলেন, সে মিরাস পাবে যেভাবে প্রস্রাব করে। [সুনানে বায়হাকি কুবরা, হাদিস: ১২৯৪]
আরও পড়ুন: শীতার্তকে বস্ত্রদানে জান্নাতে পাবে সবুজ পোশাক
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও আল্লাহর বিধান পালনে আদিষ্ট। অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতো তাদেরও আল্লাহর বিধান মেনে চলতে হবে। নিষেধ থেকে বিরত থাকতে হবে। আখেরাতে তাদেরও জবাবদিহি করতে হবে। যার ভেতর নারীর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রবল সে নারী হিসেবে এবং যার ভেতর পুরুষের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রবল, সে পুরুষ হিসেবে ইসলামের বিধান মান্য করবে। এটাই চূড়ান্ত কথা।
বাংলা বার্তা: আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ