
ছবি: সংগৃহীত
বহুল আলোচিত ও বহু প্রতীক্ষিত এক ঘটনা হতে চলেছে সম্ভবত চলতি বছরের শেষভাগে—দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রায় দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে স্বেচ্ছা নির্বাসনে লন্ডনে অবস্থানরত এই নেতা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে ফিরতে পারেন চলতি বছরের নভেম্বর নাগাদ। বিষয়টি বুধবার (৬ আগস্ট) সময় সংবাদ-কে নিশ্চিত করেছেন তার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও সাবেক কূটনীতিক হুমায়ূন কবীর।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাব্য সময় ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরেই নানা গুঞ্জন চলছিল। এবার সেই গুঞ্জনে কিছুটা পরিস্কার করলেন খোদ তার বিশ্বস্ত উপদেষ্টা হুমায়ূন কবীর। তিনি জানান, “চলতি বছরই তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। নভেম্বর মাসে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে কিংবা সেই সময়েই তিনি দেশে ফিরতে পারেন।”
এ বছরের ১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারেক রহমান। বিএনপিসহ নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে অনিশ্চয়তা ও সংশয় চলছিল নির্বাচন নিয়ে, তা অনেকটাই দূর হয় এই বৈঠকের মাধ্যমে। ওই বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের রোডম্যাপ, নির্বাচনী পরিবেশ, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের সম্ভাব্য কাঠামো নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
হুমায়ূন কবীর বলেন, “ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তারেক রহমান নির্বাচনসংক্রান্ত রোডম্যাপে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিএনপির পক্ষ থেকেও ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। এই বৈঠক ছিল রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।”
তারেক রহমানের রাজনৈতিক অবস্থান ও নির্বাচনী ভাবনার বিষয়ে জানতে যুক্তরাষ্ট্রও সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন হুমায়ূন কবীর। তার দাবি, জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্র্যাসি জ্যাকবসন লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। ওই বৈঠকে শুধু নির্বাচন নয়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়ন, মানবাধিকার, এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়েও আলোচনা হয়।
“যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহেই এ বৈঠক হয়েছে। তারা আগ্রহী বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া দেখতে,” বলেন হুমায়ূন কবীর। তারেক রহমান যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই দেশের রাজনৈতিক সংকটের একমাত্র সমাধান।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেন হুমায়ূন কবীর। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় বিদেশি কূটনীতিক ও সংস্থাগুলো বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করতে হিমশিম খেত। ভয়, বাধা এবং পর্যবেক্ষণের বেড়াজালে তারা ছিল সংকুচিত। এখন সেই বাধা কেটে গেছে। আন্তর্জাতিক মহল এখন আমাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করছে এবং আগ্রহ দেখাচ্ছে সম্পর্কোন্নয়নে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। কূটনীতিকরাও এখন নির্ভয়ে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারছেন। আমরা এর ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পাচ্ছি আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়াতেই।”
তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন মানেই বিএনপির নির্বাচনী মাঠে পূর্ণ শক্তিতে ফেরার ইঙ্গিত। তার প্রত্যাবর্তন বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে আওয়ামী লীগসহ ক্ষমতাসীন মহলে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে বলে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুবুল হক বলেন, “তারেক রহমানের দেশে ফেরা বিএনপির জন্য বড় এক ‘মরাল বুস্টার’। এর মাধ্যমে তারা নির্বাচনে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং ক্ষমতায় ফেরার জন্য সম্পূর্ণ রূপে প্রস্তুত বলেই বার্তা দেবে।”
চলতি বছর যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের বছর হতে যাচ্ছে, তা আগেই আঁচ করা যাচ্ছিল। তবে তারেক রহমানের দেশে ফেরা যদি বাস্তবেই ঘটে, তাহলে তা হবে ২০২৫ সালের রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এখন অপেক্ষা কেবল নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার, আর তার আগেই হয়তো দেশে ফিরবেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা—যার প্রত্যাবর্তন হয়তো পাল্টে দিতে পারে রাজনীতির গতিপথ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ