
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনাগুলোর একটি হয়ে উঠেছে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা। এ ঘটনায় প্রাণ হারান অগণিত শিশু শিক্ষার্থী, আহত হন অনেকে। একইসঙ্গে জীবন উৎসর্গ করেন একাধিক শিক্ষক, যাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাহসী শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী। এই শোকাবহ ঘটনার প্রেক্ষিতে এবার দলীয়ভাবে শোক পালন ও পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করলো জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দলটি জানিয়েছে, তাদের চলমান ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী বুধবার (২৪ জুলাই) চাঁদপুর ও কুমিল্লা জেলায় বড় পরিসরে পদযাত্রা আয়োজন করা হবে। তবে এবার পদযাত্রার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শোকের আবহ। মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে নিহত শিশু ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্মরণে ওই দিনের পদযাত্রা রূপ নিচ্ছে এক ধরনের শোক মিছিলে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন এবং হাতে কালো পতাকা নিয়ে পথ চলবেন।
মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব (মিডিয়া) মুশফিক উস সালেহীন এক আনুষ্ঠানিক বার্তায় গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন ও আহত হয়েছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা নিয়ে পদযাত্রার মাধ্যমে শোক প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
বিস্তারিতভাবে তিনি বলেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টি মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। আমাদের ‘জুলাই পদযাত্রা’ যেমন একটি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচি, তেমনি সমাজের প্রতিটি স্পর্শকাতর ঘটনায় আমরা জনমনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশে প্রস্তুত। মাইলস্টোনের শিশু শিক্ষার্থীদের মৃত্যু আমাদের হৃদয়ে গভীর ক্ষতের মতো। আমরা কোনো রাজনৈতিক শ্লোগান নয়, কালো পতাকা ও ব্যাজ দিয়ে সেই শোকই জানাবো।”
এনসিপি নেতারা আরও জানান, চাঁদপুর ও কুমিল্লার প্রতিটি পদযাত্রা-স্থানে পথচারী ও স্থানীয়দের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এই শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। নিহতদের জন্য দোয়া, বিশেষ বক্তব্য ও এক মিনিট নীরবতা পালন কর্মসূচির মধ্যে থাকবে।
উল্লেখ্য, সোমবার (২২ জুলাই) রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়িতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর ভেঙে পড়ে। ভয়াবহ আগুনে পুড়ে প্রাণ হারায় বহু শিশু। আহত হন অনেকে। দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “এই দুর্ঘটনা আমাদের কাঁদিয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন প্রাণহানী মেনে নেওয়া যায় না। যেভাবে শিক্ষিকা মাহেরীন নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তা জাতির সামনে অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি শুধু একজন শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন আমাদের জাতীয় মানবিক আদর্শের প্রতীক।”
দলটির মিডিয়া ইউনিট থেকে আরও জানানো হয়েছে, শুধু বুধবার নয়, পরবর্তী এক সপ্তাহজুড়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিতব্য এনসিপির পদযাত্রা ও জনসংযোগ কর্মসূচিগুলোতেও এই শোক বার্তা তুলে ধরা হবে। স্থানীয় নেতাকর্মীদেরও এই বিষয়ে নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এনসিপি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা চাই, এই ধরনের দুর্ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে। আমরা চাই, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকুক। শিশুদের জীবন রক্ষায় রাষ্ট্র, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয় জুলাই মাসের শুরুতে, দেশজুড়ে চলমান এই আয়োজনের মাধ্যমে দলটি জনগণের কাছে নিজেদের রাজনৈতিক চিন্তা, মানবিক দর্শন এবং বিকল্প নেতৃত্বের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। শোকের আবহে বুধবারের পদযাত্রা সেই প্রচেষ্টার সঙ্গে মানবিকতাকেও যুক্ত করল এক অনন্য মাত্রায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ