
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হঠাৎ করেই মধ্যরাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি। লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর এটি তার দ্বিতীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১টা। গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে বের হন বেগম খালেদা জিয়া। গন্তব্য রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল। গাড়ি বহরে ছিল পুলিশ প্রটোকলসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি। বনানী হয়ে হাসপাতালের দিকে এগিয়ে যায় শীর্ষ এ রাজনৈতিক নেত্রীর গাড়িবহর। পরিস্থিতি ছিল শান্ত, তবে দলীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন সতর্ক অবস্থানে।
বেগম জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে যান তার দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজন ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও ছিলেন গাড়িবহরে। সূত্র জানায়, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল।
রাত দেড়টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান খালেদা জিয়া। এর পরপরই হাসপাতালের অভ্যন্তরে শুরু হয় তার বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা। একাধিক চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল টিম তার চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করে। মোটামুটি এক ঘণ্টা ধরে চলে এই প্রক্রিয়া। এ সময় চিকিৎসকরা তার পূর্ববর্তী রিপোর্ট ও বর্তমান শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করেন।
তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই ভিজিট ছিল রুটিন চেকআপের অংশ। এখন পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে এবং উদ্বেগজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
রাত আড়াইটার দিকে বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ফের বনানী হয়ে গুলশানের ফিরোজার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। আনুমানিক রাত ৩টায় তিনি তার বাসায় পৌঁছান।
এই গোপনীয় ও মধ্যরাতের সফর ঘিরে জল্পনা-কল্পনার কমতি ছিল না। তবে পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা লন্ডনে হলেও দেশে ফেরার পর পরবর্তী মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবেই এই হাসপাতাল ভিজিট।
বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই লিভার, কিডনি ও হার্ট জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছেন। সর্বশেষ গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তিনি। সেখানে প্রায় ১৭ দিন চিকিৎসা নিয়ে তাকে স্থানান্তর করা হয় তারেক রহমানের বাসায়। এরপর লন্ডনে প্রায় চার মাস অবস্থানের পর গত ৫ মে দেশে ফিরে আসেন বিএনপি নেত্রী। দেশে ফেরার পর এটি ছিল তার দ্বিতীয় হাসপাতাল ভিজিট।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে এই স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দিলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার এই নিয়মিত হাসপাতালে যাওয়া একদিকে যেমন তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে, অন্যদিকে এটি দলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকেত হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ও অবস্থান সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে।
তার চিকিৎসায় যুক্ত থাকা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বেগম জিয়ার কিছু দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে যেগুলোর জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। বিশেষ করে তার লিভার ও কিডনির অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ইনফেকশন পরিস্থিতিও নিরীক্ষণ করা হয়।
চিকিৎসক দল আরও জানায়, "তিনি স্থিতিশীল আছেন। তবে উচ্চমাত্রার যত্ন ও নিয়মিত ফলোআপ প্রয়োজন। কোনো জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।"
বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। তবে দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমাদের সবসময়ই উদ্বেগ থাকে। তবে গতরাতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছিল পূর্বনির্ধারিত। সেজন্য আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সবসময়ই দলের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকেছে। তার সামান্য অস্বস্তিও জাতীয় রাজনীতিতে আলোড়ন তোলে। মধ্যরাতে এমন আকস্মিক হাসপাতালে যাত্রা ও পরীক্ষার খবরে তা আবারও প্রমাণিত হলো। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই, তবুও রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
আগামী দিনগুলোতে তার নিয়মিত চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে—এই আশ্বাসই দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ