
ছবি: সংগৃহীত
জুলাই ঘোষণাপত্র, ‘জুলাই সনদ’ এবং জুলাই গণহত্যার বিচার দাবি করে দেশব্যাপী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির কেন্দ্র থেকে নবগঠিত জেলা ও উপজেলা সমন্বয় কমিটিগুলোকে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) প্রথম কার্যনির্বাহী সভা আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সভাগুলোর মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলন কর্মসূচির সূচনা করতে চায় এনসিপি।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাতে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন রিফাত স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, এনসিপির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেন যৌথভাবে দেশের প্রতিটি জেলায় ও উপজেলায় নবগঠিত কমিটিকে নিজ নিজ কার্যালয়ে ‘কার্যনির্বাহী সভা’ আহ্বানের নির্দেশ দিয়েছেন। এই সভায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, এবং জুলাই-সম্পর্কিত দাবিসমূহকে সামনে রেখে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।
দলটি জানায়, এবারের কর্মসূচির লক্ষ্য শুধু কেন্দ্রীয় দাবি উত্থাপন নয়, বরং তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে সক্রিয় ও দৃশ্যমান করা। ঘোষিত কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা কমিটির কার্যকর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি এবং গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে এলাকায় জনসচেতনতা বাড়াবে এবং পর্যায়ক্রমে মানববন্ধন, পদযাত্রা, গণস্বাক্ষর অভিযান ও স্মারকলিপি প্রদান করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এনসিপি তিনটি প্রধান দাবিকে সামনে রেখে এই কর্মসূচি সাজিয়েছে। দাবিগুলো হলো:
জুলাই ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন: এনসিপি মনে করে, এই ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা। তাই এটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক দলিল হিসেবে সরকারিভাবে গ্রহণ করতে হবে।
জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও কার্যকর বাস্তবায়ন: সম্প্রতি সরকার যে ‘জুলাই শহীদ ও যোদ্ধাদের পুনর্বাসন ও কল্যাণ অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করেছে, তা স্বাগত জানিয়ে এনসিপি বলছে—এই সনদের কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন, ক্ষতিপূরণ কাঠামো নির্ধারণ এবং রাজনৈতিক হয়রানির বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
জুলাই গণহত্যার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচার: এনসিপির দাবি, এই গণহত্যা শুধু জাতীয় ট্র্যাজেডি নয়, এটি একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির এই কর্মসূচি শুধু সাংগঠনিক প্রস্তুতির অংশ নয়, এটি একটি রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে। সাম্প্রতিক সময়ে জুলাই আন্দোলনের প্রসঙ্গ দেশের রাজনীতিতে ফের গুরুত্ব পাচ্ছে, বিশেষ করে সরকারপন্থি এবং বিরোধী পক্ষের একাধিক দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে এই ইস্যু ঘিরে। এনসিপি এমন একটি সময় এই কর্মসূচি ঘোষণা করল, যখন রাজনৈতিক সমীকরণ নতুনভাবে বিন্যস্ত হচ্ছে এবং জনগণের প্রত্যাশাও সাংগঠনিক দৃঢ়তার দিকে।
দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “জুলাই আমাদের অস্তিত্বের অংশ। এর বিকৃতি, অপব্যাখ্যা বা বাণিজ্যিকীকরণ আমরা হতে দেব না। এই কর্মসূচি শুরু হলেও এটি থেমে যাবে না—এটি হবে ধারাবাহিক জাতীয় আন্দোলনের ভিত্তি।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এনসিপির প্রতিটি জেলা ও উপজেলা কমিটিকে তাদের নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যনির্বাহী সভার মাধ্যমে কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে ব্যানার-ফেস্টুন, পোস্টার, আলোচনাসভা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দলের প্রচারণা বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মূলত জুলাই আন্দোলন ঘিরেই রাজনৈতিক পরিচিতি গড়ে তুলেছে। দলটি দাবি করে, তারাই প্রথম জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টা শুরু করে। তাদের মতে, সরকার যে অধ্যাদেশ জারি করেছে সেটি তাদের দাবিরই প্রতিফলন, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ নয়। এনসিপি এখন চায়, এসব ইস্যুতে একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠুক—যেখানে সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ থাকবে।
এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এনসিপি শুধু দাবি তোলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না—তারা এলাকাভিত্তিক গণসংযোগ ও ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় সমাবেশ আয়োজনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এনসিপির এমন রাজনৈতিক সক্রিয়তা আগামী কয়েক সপ্তাহে জাতীয় রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ