
ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে শুরু করেছে আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। ঈদ উদযাপনকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের মতো এবারও যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে পর্যায়ক্রমে অগ্রিম টিকিট বিক্রির সূচি নির্ধারণ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই সূচি অনুযায়ী আজ ২৫ মে (রোববার) বিক্রি হচ্ছে আগামী ৪ জুনের ট্রেনের টিকিট।
রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৭ জুন ঈদুল আজহার দিন ধরে ঈদের আগে ৭ দিনের জন্য আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিশেষ ব্যবস্থায় অগ্রিম বিক্রি করা হচ্ছে। ২৫ মে বিক্রি হচ্ছে ৪ জুনের টিকিট, ২৬ মে বিক্রি হবে ৫ জুনের টিকিট এবং ২৭ মে পাওয়া যাবে ৬ জুনের টিকিট। এর আগেই ধাপে ধাপে ৩১ মে, ১ জুন, ২ জুন ও ৩ জুনের টিকিট বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে।
শতভাগ অনলাইন বিক্রির সিদ্ধান্ত
এই বছরের ঈদ ব্যবস্থাপনায় যাত্রীদের সুবিধা বিবেচনায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শতভাগ ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হবে। অর্থাৎ, কাউন্টার বা স্টেশনে গিয়ে কোনো টিকিট সংগ্রহ করার সুযোগ থাকছে না। যাত্রীদের মোবাইল অ্যাপ, ওয়েবসাইট বা নির্ধারিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।
রোববার (২৫ মে) সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনগুলোর টিকিট বিক্রি এবং দুপুর ২টায় শুরু হবে পূর্বাঞ্চলগামী ট্রেনগুলোর টিকিট বিক্রি। দুই অঞ্চলের যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে এই সময় বিভাজনের পদক্ষেপ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
৩৩ হাজারের বেশি আসনের ব্যবস্থা
বাংলাদেশ রেলওয়ের ঈদ কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, এবারের ঈদে শুধুমাত্র ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে মোট আসনের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩১৫টি। প্রতিদিন এই আসনগুলোর নির্দিষ্ট অংশ টিকিট আকারে অনলাইনে উন্মুক্ত করা হচ্ছে, যাতে পর্যায়ক্রমে যাত্রীরা তাদের সুবিধামতো দিনে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন।
ফিরতি টিকিট নয়, প্রতি ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৪টি
রেল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, এই অগ্রিম টিকিটগুলো ফেরতযোগ্য নয়। অর্থাৎ, টিকিট কিনে যাত্রী যদি পরে সফর বাতিল করতে চান, সেক্ষেত্রে রেলওয়ে কোনো রিফান্ড বা পরিবর্তনের সুযোগ দেবে না। তাছাড়া প্রতিজন টিকিটপ্রত্যাশী সর্বোচ্চ চারটি আসনের টিকিট একবারে সংগ্রহ করতে পারবেন। এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে যেকোনো টিকিট বাতিল বা গ্রাহক আইডি ব্লক করার ক্ষমতা রেল কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে।
যাত্রীদের জন্য রেলওয়ের বিশেষ ব্যবস্থা
প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদে ট্রেনযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা মোকাবেলায় কয়েকটি বিশেষ ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত থাকলেও, মূলত আন্তঃনগর ট্রেনেই সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে। এজন্য অনলাইন সিস্টেমের সক্ষমতা বাড়ানো, সার্ভার আপডেট, ব্যবহারকারীর জন্য ইউজার ফ্রেন্ডলি টিকিটিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।
এছাড়া ট্রেনের নির্ধারিত সময় মেনে চলা, অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, স্টেশনগুলোর বিশেষ পরিষেবা ও যাত্রী সহায়তার জন্য অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
যাত্রীরা যেন সঠিকভাবে টিকিট কিনে নির্দিষ্ট দিনে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন, সে জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করে বলা হচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই দালাল বা প্রতারকের খপ্পরে পড়বেন না। কেবলমাত্র বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, রেল অ্যাপ বা অনুমোদিত মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের মাধ্যমেই টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।
সারসংক্ষেপে টিকিট বিক্রির তারিখসূচি:
৩১ মে-এর টিকিট বিক্রি: ২১ মে
১ জুন-এর টিকিট বিক্রি: ২২ মে
২ জুন-এর টিকিট বিক্রি: ২৩ মে
৩ জুন-এর টিকিট বিক্রি: ২৪ মে
৪ জুন-এর টিকিট বিক্রি: ২৫ মে
৫ জুন-এর টিকিট বিক্রি: ২৬ মে
৬ জুন-এর টিকিট বিক্রি: ২৭ মে
ঈদের এই ব্যস্ত সময়ে ট্রেন যাত্রাকে নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের এই অগ্রিম টিকিট বিক্রির উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে যাত্রীদের পক্ষ থেকে। তবে টিকিট পাওয়ার প্রতিযোগিতা যেমন কঠিন, তেমনি সচেতনতা ছাড়া টিকিট বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। এজন্য সকল যাত্রীকে নির্ধারিত সময়েই প্রস্তুত হয়ে টিকিট সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ