
ছবি: সংগৃহীত
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরনো বৈরিতা আবারও রক্তক্ষয়ী রূপ নিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব কন্ট্রোল (LoC) বরাবর ফের শুরু হয়েছে তীব্র গোলাগুলি ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাল্টাপাল্টি ঘটনা। বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত থেকে শুরু হওয়া এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয় পাকিস্তানের অভিযোগিত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে, যার লক্ষ্য ছিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের উধমপুর এবং পাঞ্জাবের পাঠানকোট অঞ্চলের তিনটি সামরিক ঘাঁটি। ভারতীয় সেনাবাহিনী এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে পাল্টা জবাব দেয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী প্রথমে রাতের অন্ধকারে একাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালায়। এই ঘটনার জেরে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয় এবং ভোর পর্যন্ত ব্ল্যাকআউট পরিস্থিতি বজায় থাকে। পরদিন শুক্রবার (৯ মে) সকালে কুপওয়ারা ও উরি সেক্টরসহ নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে পাকিস্তানি সেনারা আবারও গুলিবর্ষণ শুরু করে। ভারতীয় বাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়।
এই পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। ভারতীয় সূত্রের দাবি, পাকিস্তানি গোলাবর্ষণে অন্তত ১৬ ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি, তবে সংঘর্ষের মাত্রা ও সময়সীমা দেখে ধারণা করা হচ্ছে যে এটি একটি সুপরিকল্পিত সামরিক অভিযানের অংশ হতে পারে।
ভারতের এই হামলার অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ এক বিবৃতিতে বলেন, “কাশ্মীরে যেকোনো হামলার দায় পাকিস্তান নেয় না। এটি সম্পূর্ণ ভারতের অভ্যন্তরীণ অথবা অন্য উৎস থেকে পরিচালিত হতে পারে।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, পাকিস্তান সংঘর্ষ চায় না, তবে আত্মরক্ষার অধিকার রাখে।
এই উত্তেজনার মধ্যে মার্কিন কূটনৈতিক হস্তক্ষেপও দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও টেলিফোনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে কথা বলেন। কথোপকথনের সময় প্রধানমন্ত্রী শরীফ জানান, ভারতের হামলা শুধু পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের প্রতি অবমাননা নয়, বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
উত্তেজনার এই নতুন অধ্যায় আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এমন সামরিক উত্তেজনা যে কোনো সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে সীমান্তের সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং যেকোনো ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা সামনে এসেছে।
ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আগ্রহ দেখায়নি। তবে দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো প্ররোচনার জবাব কঠোরভাবে দেওয়া হবে।
এই নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের ঘটনা শুধু ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি ভয়াবহ বার্তা বহন করে। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতেও এমন সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে, যদি না কূটনৈতিকভাবে দ্রুত শান্তি ও সংযমের পথ খোঁজা হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ