
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান ডিজিটাল যুগে ইউটিউব শুধু একটি ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে জ্ঞান, বিনোদন, শিক্ষা এবং সর্বশেষ খবর জানার এক অনন্য মাধ্যম। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার মধ্যেই ইউটিউবের ব্যবহার প্রায় অপরিহার্য। যেকোনো সমস্যার সমাধান থেকে শুরু করে রান্নার রেসিপি, সিনেমা, গানের ভিডিও, লাইভ নিউজ কিংবা ধর্মীয় আলোচনা—সব কিছুই যেন হাতের মুঠোয় এনে দেয় ইউটিউব।
তবে এবার এই অতি প্রয়োজনীয় অ্যাপটি ব্যবহার নিয়ে বেশ কিছু আইফোন ব্যবহারকারীর জন্য এলো এক দুঃসংবাদ। গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউব কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, তারা শিগগিরই তাদের অ্যাপের জন্য নতুন আপডেট আনতে যাচ্ছে, যা কেবলমাত্র iOS 16 এবং তার পরবর্তী সংস্করণে চলা ডিভাইসগুলোতেই কাজ করবে। ফলে যেসব আইফোন ডিভাইস iOS 16 সাপোর্ট করে না, সেই ফোনগুলোতে ইউটিউব অ্যাপ আর ব্যবহার করা যাবে না।
এ সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি দুনিয়ায় বিরল কিছু নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন ফিচার, নিরাপত্তা আপডেট এবং স্মার্ট ফাংশনের প্রয়োগের জন্য অ্যাপ নির্মাতারা নিয়মিতই তাদের সিস্টেমের ন্যূনতম চাহিদা (minimum system requirement) বাড়িয়ে দেন। কিন্তু তাতে সমস্যায় পড়ে যান অনেক পুরনো ফোন ব্যবহারকারী, যারা হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার আপগ্রেড করতে না পেরে পুরনো ডিভাইসেই সীমাবদ্ধ থাকেন।
ইউটিউবের নতুন আপডেট কার্যকর হওয়ার পর যে ডিভাইসগুলো সরাসরি অ্যাপ ব্যবহার করে ইউটিউব চালাতে পারবে না, সেগুলো হলো:
iPhone 6s
iPhone 6s Plus
iPhone 7
iPhone 7 Plus
iPhone SE (1st Generation)
iPod Touch (7th Generation)
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই ডিভাইসগুলোর কোনোটিই iOS 16-এ আপগ্রেড করার সক্ষমতা রাখে না। ফলে সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে ইউটিউব চালু রাখার সুযোগ এখানে থাকছে না।
এমন ঘোষণার পর অনেকেই ভাবতে পারেন, তাহলে কি পুরোপুরি ইউটিউব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এসব ফোনে? না, আসলে তা নয়। শুধুমাত্র ইউটিউব অ্যাপটি আর কাজ করবে না। তবে যেহেতু ইউটিউব একটি ওয়েব-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম, তাই ব্যবহারকারীরা গুগল ক্রোম, সাফারি বা অন্য যে কোনো মোবাইল ব্রাউজার ব্যবহার করে ইউটিউব ওয়েবসাইটে ঢুকে ভিডিও দেখতে পারবেন।
সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে ফোনের ব্রাউজারে গিয়ে m.youtube.com এই ঠিকানায় প্রবেশ করতে হবে। এখান থেকে সাধারণ ইউটিউব ব্রাউজিং এবং ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতা পাওয়া সম্ভব। যদিও ব্রাউজার ভার্সনে কিছু ফিচার সীমিত হতে পারে—যেমন পিকচার-ইন-পিকচার মোড, ডার্ক মোড বা সহজাত নেভিগেশন সুবিধা—তবুও মূল কাজটি ঠিকভাবেই চালানো যাবে।
ইউটিউব বা যেকোনো আধুনিক অ্যাপ যখন নতুন ফিচার চালু করে, তখন তা নিরাপত্তা, পারফরম্যান্স ও ইউজার এক্সপেরিয়েন্সের দিক থেকে অনেক বেশি উন্নত হয়। কিন্তু পুরোনো ফোনের হার্ডওয়্যার বা অপারেটিং সিস্টেমের সীমাবদ্ধতার কারণে নতুন ফিচারগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
ফলে অ্যাপ ডেভেলপাররা বাধ্য হন পুরোনো ভার্সনের সাপোর্ট বন্ধ করে দিতে। এটি শুধুমাত্র ইউটিউব নয়—ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এমনকি অ্যাপলের নিজস্ব অনেক অ্যাপেও নিয়মিত ঘটে থাকে। নিরাপত্তার দিক থেকেও পুরোনো অপারেটিং সিস্টেমগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে, যার ফলে হ্যাকিং বা ডেটা লিকের সম্ভাবনা বাড়ে।
যারা এখনো iPhone 6s, iPhone 7 বা iPhone SE (1st Gen) ব্যবহার করছেন এবং ইউটিউব অ্যাপ ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য দুইটি পথ খোলা আছে:
ব্রাউজার ব্যবহার করুন: অ্যাপে না হলেও ব্রাউজার থেকে ইউটিউব দেখা সম্ভব। এটি তুলনামূলক একটু কম সুবিধাজনক হলেও কার্যকর বিকল্প।
নতুন ডিভাইস ব্যবহার: যারা নিয়মিত ইউটিউবসহ অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহার করেন এবং উন্নত ফিচার পেতে চান, তাদের জন্য iOS 16 বা পরবর্তী ভার্সন সাপোর্ট করে এমন একটি নতুন আইফোন মডেলে আপগ্রেড করাই হবে যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত।
প্রযুক্তির এই অবিরাম অগ্রগতির ধারায় পুরোনো অনেক কিছুই বিদায় নিতে বাধ্য হয়। ইউটিউবের এই সিদ্ধান্তও সেই ধারারই অংশ। যারা পুরোনো আইফোন ব্যবহার করছেন, তাদের জন্য এটি কিছুটা কষ্টকর হলেও এটি সময়ের দাবি। প্রযুক্তিকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবহার করাই একজন স্মার্ট ব্যবহারকারীর দায়িত্ব। তবে আশার কথা, ইউটিউব পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না, ব্রাউজার থেকেই এখনও দেখা যাবে প্রিয় ভিডিও কনটেন্টগুলো।
তাই ভয় বা আতঙ্ক নয়—সমস্যার বিকল্প খুঁজে নিয়ে প্রযুক্তিকে নিজের মতো ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ