
ছবি: সংগৃহীত
সকালের নাশতায় ডিম খাওয়া পুষ্টিকর এবং শক্তি যোগায়, তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে ডিম খাওয়ার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মেনে চলা জরুরি, বিশেষত যারা হার্টের সমস্যা, অ্যালার্জি বা হজমজনিত সমস্যা নিয়ে ভুগছেন। নতুন গবেষণা ও পুষ্টিবিদদের মতামত অনুযায়ী, সকালে ডিমের সঠিক ব্যবহার স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ হতে পারে, কিন্তু ভুলভাবে খেলে বিপদের কারণও হতে পারে।
১. অতিরিক্ত ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলুন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “প্রতিদিন এক বা দুইটির বেশি ডিম খাওয়া কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে। যারা হার্টের রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।” ডিমের মধ্যে প্রচুর প্রোটিন থাকলেও, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পুষ্টিবিদ ডা. রিমা খাতুন মন্তব্য করেছেন, “সকালে ১ টি ডিম স্বাস্থ্যকর, ২ টি হলে সীমা অতিক্রম হয় না, কিন্তু তিন বা চারটি ডিম নিয়মিত খেলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই পরিমিতি মেনে খাওয়া উচিত।”
২. ভাজা ডিমের বদলে সেদ্ধ ডিম
সকালের নাশতায় ভাজা ডিম বা তেলে রান্না করা অমলেট খেলে তেল ও ঝাল বেশি হয়, যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, “সেদ্ধ ডিম সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এতে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলের হার ক্ষয় হয় না।”
ডা. সোহেল রানা বলেন, “সেদ্ধ ডিম হজমে সহজ, এবং এটি সকালে শরীরকে দীর্ঘ সময় পুষ্টি ও শক্তি দেয়। ভাজা ডিমে অতিরিক্ত তেল থাকায় ব্রেন ফ্যাট ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধি হতে পারে।”
৩. খালি পেটে ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, “খালি পেটে ডিম খেলে অনেকের অম্লতা, বুক জ্বালা বা গ্যাস্ট্রিক হতে পারে। তাই ডিমের সঙ্গে ফল, শাকসবজি, ভাত বা রুটি খাওয়া উত্তম।”
ডা. মেহেদী হাসান বলেন, “ডিম প্রোটিন সমৃদ্ধ, কিন্তু তা একেবারে খালি পেটে খেলে হজমে সমস্যা তৈরি হয়। নাশতার সময় ডিমের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট বা ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে হজম সহজ হয় এবং পুষ্টি ভালোভাবে শোষিত হয়।”
৪. ডিমের মান যাচাই করা জরুরি
শ্রেষ্ঠ স্বাস্থ্য প্র্যাকটিস অনুসারে, পচা বা ফাটলযুক্ত ডিম খাওয়া বিপজ্জনক। বিশেষ করে ফ্রিজে অনেকদিন রাখা ডিম সকালে খাওয়া উচিত নয়।
ডা. রুবিনা আক্তার বলেন, “পচা ডিমে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয় যা ফুড পয়জনিং ও অন্ত্র সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। তাই ডিম কিনে দেখুন ফাটল আছে কি না, এবং ফ্রিজে কতদিন রাখা হয়েছে।”
৫. অ্যালার্জি আছে কি না যাচাই করুন
যাদের ডিমে অ্যালার্জি রয়েছে, যেমন চুলকানি, চামড়ায় দাগ বা শ্বাসকষ্ট, তাদের জন্য সকালে ডিম খাওয়া সম্পূর্ণভাবে এড়ানো উচিত।
ডা. নিশাত জাহান মন্তব্য করেছেন, “অ্যালার্জি থাকলে এক বাইটও ডিম খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। তাই যারা পূর্বে ডিম খেলে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখেছেন, তাদের অবশ্যই ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।”
সকালের নাশতায় ডিম খাওয়া শক্তি যোগায় এবং মস্তিষ্ক ও শরীরকে সক্রিয় রাখে। তবে সঠিক পরিমাণ, সঠিকভাবে রান্না, এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য অনুযায়ী ডিম খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রতিদিন ১-২ টি সেদ্ধ ডিম, সঙ্গে ফল বা রুটি/ভাত খেলে স্বাস্থ্যকর সকালের খাবার নিশ্চিত হবে।
সকালের ডিম ভাঙা ও রান্নার পদ্ধতি, মান যাচাই এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিবেচনা করা হলে এটি শক্তি ও পুষ্টিতে সমৃদ্ধ একটি খাবার হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ