
ছবি: সংগৃহীত
ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী এ রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ২৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১১৪ জন মারা গেছেন এবং প্রায় ২৮ হাজার ২০২ জন রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার (২৩ আগস্ট) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়—শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে শনিবার (২৩ আগস্ট) সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ জন। এছাড়া, একই সময়ে ২৪৭ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগে ৫৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৭ জন, ঢাকা বিভাগে ৩১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬৮ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন ভর্তি হয়েছেন।
ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে বছরের প্রথম দিক থেকেই। জানুয়ারি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ১৬১ জন রোগী, ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি হন ৩৭৪ জন এবং মার্চে ভর্তি হন ৩৩৬ জন রোগী। এরপর এপ্রিল থেকে সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে—এপ্রিলে ভর্তি ৭০১ জন, মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩ জন এবং জুনে প্রায় ৫ হাজার ৯৫১ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন জুলাই মাসে—মাত্র এক মাসেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ হাজার ৬৮৪ জন। আগস্টেও ডেঙ্গু সংক্রমণ থেমে থাকেনি; এ মাসের এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার ২২২ জন রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ৭ জন, মে মাসে ৩ জন, জুনে ১৯ জন এবং জুলাইয়ে ৪১ জন মারা যান। আগস্ট মাসে ইতোমধ্যেই প্রাণহানি ঘটেছে ৩১ জনের। সব মিলিয়ে এই বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৪ জনে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত, অকার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নগরীতে জমে থাকা পানিই মূলত মশাবাহিত এই রোগকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গ্রামের তুলনায় শহরে সংক্রমণের হার বেশি হলেও বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের গ্রামীণ অঞ্চলেও এর বিস্তার বাড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতিটি বিভাগ ও জেলার হাসপাতালগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের পাশাপাশি অতিরিক্ত ওয়ার্ড খোলা হচ্ছে যাতে রোগীর চাপ সামলানো যায়। একইসঙ্গে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে—নিজ বাড়ি, অফিস ও আশপাশের পরিবেশে পানি জমতে না দেওয়া, পাত্র-পাতিলে জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া এবং নিয়মিত মশার কয়েল, মশারি বা স্প্রে ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ডেঙ্গু এখন কেবল মৌসুমি নয়, বরং সারা বছরই কম-বেশি বিদ্যমান। তবে বর্ষা মৌসুমে এর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। চলতি বছরের প্রবণতা দেখে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন—আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
সরকারি পর্যবেক্ষণে বলা হচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বড় একটি অংশই শিশু ও বয়স্ক, যাদের জটিলতা তুলনামূলক বেশি। দ্রুত চিকিৎসা না পেলে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ