
ছবি: সংগৃহীত
এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাংলাদেশে প্রতিদিনই নতুন উদ্বেগ তৈরি করছে। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩১১ জন রোগী।
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১১০ জনে। আর আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২৭ হাজার ৭৮২ জন মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার একদিনেই আক্রান্ত ৩১১ জনের মধ্যে সর্বাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় একাই ১৫৪ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করা পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়। বাকি দুইজনের মৃত্যু হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর ঘনবসতি, পানি জমে থাকা ড্রেন ও নির্মাণাধীন ভবনের কারণে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হলেও এখন রোগটি সারাদেশেই বিস্তার লাভ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এদিন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ পুরো ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট বিভাগেও রোগী বাড়ছে। বিশেষ করে রাজশাহী বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একটি সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখছেন।
ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ এখনও বেশি। জরুরি বিভাগে রোগীর ভিড় এবং শয্যার সংকট দেখা দিচ্ছে অনেক হাসপাতালে। আইসিইউ বেডের সংখ্যা সীমিত হওয়ায় গুরুতর রোগীদের নিয়ে স্বজনদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্তদের অনেকেই দেরি করে হাসপাতালে আসছেন, ফলে জটিলতা বাড়ছে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এডিস মশা নির্মূল না করা গেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এ বছর বর্ষার দীর্ঘায়িত বৃষ্টিপাত ও শহরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। তারা জানিয়েছেন, বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য ডেঙ্গু সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বারবার সতর্ক করে বলছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা সবচেয়ে বড় অস্ত্র। বাসা-বাড়ি ও আশপাশে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন মশা জন্মানোর সম্ভাব্য স্থানগুলো পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি জ্বর দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ইতোমধ্যে ২৭ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই ঊর্ধ্বগতি যদি নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে পরিস্থিতি মহামারির আকার ধারণ করতে পারে।
সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখনই সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ