
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সুবিধা কার্যকর করার চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এর ফলে দুই দেশের কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তারা এখন থেকে বিনা ভিসায় একে অপরের দেশ সফর করতে পারবেন। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
শফিকুল আলম জানান, এই চুক্তি ৫ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে। এটি শুধুমাত্র কূটনীতিক ও সরকারি কাজে ব্যবহৃত অফিসিয়াল এবং ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টধারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। তিনি বলেন, “এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস। পাকিস্তানের মতো এমন ভিসা অব্যাহতি চুক্তি আমরা ইতোমধ্যেই ৩১টি দেশের সঙ্গে করেছি।”
এর ফলে বাংলাদেশ থেকে যারা অফিসিয়াল ও কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করেন, তারা পাকিস্তানে সরকারি সফরে গেলে কোনো ভিসা লাগবে না। একইভাবে পাকিস্তানের কর্মকর্তারাও বাংলাদেশে ভিসা ছাড়াই আসতে পারবেন।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে নতুন মাত্রা পাচ্ছে। কয়েক বছর আগে থেকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রমেও দুই দেশকে আরও কাছাকাছি আনার উদ্যোগ চলছে। ভিসা ছাড় চুক্তি এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।
প্রেস ব্রিফিংয়ে শুধু কূটনৈতিক চুক্তির কথা নয়, বিগত সরকারের নানা অনিয়ম নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ খাতই ছিল সবচেয়ে বেশি চুরির জায়গা। অতীত সরকারের আমলে তাদের পছন্দের লোকদের এই খাতে চুরির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।” তার মতে, এই অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যুৎ খাত আজও চাপে রয়েছে।
ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম আরও জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুটি ভাগ করার সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের সংশোধনী পাস হয়েছে। এখন থেকে যে কোনো ক্যাডার সার্ভিসের যোগ্য কর্মকর্তা অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে এই দুই বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
প্রেস সচিব আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১০টি সংস্কার কমিশনের ৩৬৭টি প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রশাসনিক জটিলতা কমিয়ে আনা এবং জনগণের প্রত্যাশিত সেবা প্রদানে নতুন ধারা তৈরি হবে।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এই ভিসা ছাড় চুক্তি মূলত প্রশাসনিক যোগাযোগকে সহজ করবে। আগে সরকারি সফরে যেতে হলে দুই দেশের কর্মকর্তাদের ভিসা পেতে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হতো। এখন সেই ঝামেলা দূর হবে। একই সঙ্গে এটি দুই দেশের রাজনৈতিক আস্থার সম্পর্ককেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, পাকিস্তানের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি কার্যকর হওয়ার ফলে শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ও আরও গতিশীল হবে। প্রেস সচিব বলেন, “এটি শুধু একটি কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে আস্থার সেতুবন্ধন তৈরি করার একটি উদ্যোগ।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ