
ছবি: সংগৃহীত
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এতে সরকারের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যে রাজস্ব খাত সবচেয়ে বড় ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। আর গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই মাসে আদায় হয়েছিল ২১ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আদায়ে বেড়েছে ৫ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ, অভ্যন্তরীণ বাজারে মুদ্রাস্ফীতি ও ব্যবসায়িক অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়াতে পারা সরকারের বড় অর্জন।
সব খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) খাতে। এ খাত থেকে জুলাই মাসে সংগ্রহ হয়েছে ১১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই মাসে এ খাতে আদায় হয়েছিল ৮ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। ফলে ভ্যাট খাতে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা সামগ্রিক রাজস্ব প্রবৃদ্ধির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
এনবিআর বলছে, ভ্যাট সংগ্রহে এ প্রবৃদ্ধি এসেছে মূলত খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট প্রদানে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের ই-ভ্যাট ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং বড় করদাতাদের নজরদারি জোরদারের ফলে।
রাজস্ব আদায়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রেখেছে আয়কর ও ভ্রমণ কর খাত। জুলাই মাসে এ খাতে আদায় হয়েছে ৬ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ৫ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, আয়কর প্রদানে করদাতাদের উৎসাহিত করতে অনলাইন কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভ্রমণ করের আওতা বাড়ানো এবং বিদেশগামী যাত্রীদের ওপর নজরদারি বাড়ানোয় এ খাতে রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
জুলাই মাসে আমদানি শুল্ক খাত থেকে আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এ খাত থেকে আদায় হয়েছিল ৮ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৫২ শতাংশ।
বন্দরভিত্তিক শুল্ক আদায়ে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, আমদানি প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন এবং কাস্টমসে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর ফলে শুল্ক আদায় বেড়েছে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজেট বাস্তবায়নে রাজস্ব আদায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচক। জুলাই মাসের এ সাফল্য পুরো অর্থবছরের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এ ধারা অব্যাহত থাকে তবে বাজেট ঘাটতি কমানো, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে শক্তিশালী করতে সরকার আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।
তবে তারা একই সঙ্গে সতর্ক করে বলছেন, রাজস্ব আদায়ের এ ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, কর ফাঁকি রোধ করা এবং করদাতাদের আস্থা বাড়াতে হবে।
যদিও জুলাই মাসের তথ্য আশাব্যঞ্জক, তবু পুরো অর্থবছর জুড়ে এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সহজ হবে না। মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, বৈশ্বিক বাজারের অনিশ্চয়তা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রভাব রাজস্ব সংগ্রহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া আমদানি নির্ভর অর্থনীতিতে পণ্যের দাম কমে গেলে আমদানি শুল্ক খাতেও রাজস্ব হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানিয়েছে, তারা রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কর প্রশাসনকে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে চায়। অনলাইনে কর দাখিলের সংখ্যা আরও বাড়ানো, ব্যবসায়ীদের ই-ভ্যাট ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং কাস্টমসে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাবার্তা/এসজে