
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মান, গতি ও প্রতিযোগিতা গত কয়েক বছরে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন ঘটিয়েছে। একদিকে ভারত ক্রিকেটের বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছে, অন্যদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানও বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলকে ঘিরে বারবার শোনা যাচ্ছে স্থবিরতা আর পিছিয়ে পড়ার অভিযোগ। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম মনে করেন, বিশ্ব ক্রিকেট যতটা এগিয়েছে, বাংলাদেশ ততটাই পিছিয়ে পড়ছে।
আফগানিস্তানের উদাহরণ টেনে মুশফিক বলেন, দেশটির ক্রিকেটাররা নিজেদের মাঠে খেলার তো সুযোগই পায় না, এমনকি নিরাপত্তার কারণে দেশেও অনুশীলন করতে পারে না। বাধ্য হয়ে ভারতের দেরাদুন মাঠকে তারা ব্যবহার করে অনুশীলন আর ম্যাচের জন্য। সীমিত সুযোগ-সুবিধা, অন্যের মাঠে নির্ভরশীলতা—সব মিলিয়ে যেকোনো দেশের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। তবু আফগানিস্তান ক্রিকেট দল গত কয়েক বছরে দেখিয়েছে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স।
২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তারা ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। শক্তিশালী ইংল্যান্ড, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মতো সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলকে হারিয়ে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করে। অনুশীলন সুবিধার ঘাটতি কিংবা ঘরের মাঠ না থাকা তাদের সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চিত্র ভিন্ন। একসময় তরুণ প্রতিভার ভিড়ে যে দলকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় দল হিসেবে বিবেচনা করা হতো, বর্তমানে তাদের পারফরম্যান্সে নেই ধারাবাহিকতা। অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ হলেও মাঠে সাফল্যের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
১৯ আগস্ট মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুশফিক খোলাখুলি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “বিশ্ব ক্রিকেট যত দূর এগিয়ে গেছে, বাংলাদেশ তাদের থেকে অনেক পিছিয়ে। আমরা যদি সঠিক সাপোর্টটা দিতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেটও এগোতে পারবে।”
অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার মনে করেন, বর্তমান প্রজন্ম হয়তো পুরো সুযোগ পাবে না, তবে আগামী প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশ দিতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা তো ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ দিকে। আশা করব, পরের প্রজন্মের জন্য আমরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারি, যাতে তারা নিয়মিত সব জায়গায় গিয়ে খেলতে পারে। মাঠ এবং অনুশীলনের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা যেন তারা পায়।”
ক্রীড়া বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার পেছনে কয়েকটি বড় কারণ আছে। প্রথমত, ক্রিকেট বোর্ডের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব। দ্বিতীয়ত, ঘরোয়া ক্রিকেটে পেশাদারিত্বের ঘাটতি এবং প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টের স্বল্পতা। তৃতীয়ত, খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না করা। এসব কারণে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে অবদান রেখে আসা মুশফিক চান তার পরের প্রজন্ম যেন ভিন্ন এক বাস্তবতায় খেলতে পারে। তিনি বিশ্বাস করেন, যদি যথাযথ অবকাঠামো, আধুনিক অনুশীলন সুবিধা এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়, তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট আবারও এগিয়ে যাবে।
বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মুশফিকের এ মন্তব্য শুধুই হতাশা নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বিশ্ব ক্রিকেট যেখানে ক্রমাগত উন্নতির পথে ছুটছে, সেখানে বাংলাদেশকে পিছিয়ে পড়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে নতুনভাবে পরিকল্পনা সাজাতেই হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ