
ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, যার মূল দায়িত্ব হলো দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমন করা। তবে এবার সেই সংস্থারই দুই উপ-পরিচালককে দায়িত্বে অবহেলা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হলেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আহসানুল কবীর পলাশ এবং আরেক উপ-পরিচালক কমলেশ মন্ডল।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুদকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে। জানা যায়, এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো শুধু দুদকের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, বরং জনমনে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।
দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, উপ-পরিচালক মো. আহসানুল কবীর পলাশকে ২০২৩ সালের নভেম্বরে একটি গুরুতর অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল— তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং জাল কাগজপত্র তৈরি করে একটি বেসরকারি আবাসন প্রকল্প রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিমিটেডকে প্ল্যান পাস করতে সহায়তা করেছেন।
কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার পরও তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেননি। শুধু তাই নয়, সময় বৃদ্ধির জন্যও কোনো আবেদন জানাননি। এ অবস্থায় কমিশন বিষয়টিকে স্পষ্ট দায়িত্ব অবহেলা এবং কর্মচারী বিধিমালা, ২০০৮–এর লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করে।
গত ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত কমিশনের এক সভায় তার বিরুদ্ধে ৪৩(১) বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এরই অংশ হিসেবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি প্রচলিত বিধি অনুযায়ী খোরাকী ভাতা পাবেন। এই আদেশ কার্যকর হবে গত ৬ আগস্ট থেকে।
অন্যদিকে, দুদকের আরেক উপ-পরিচালক কমলেশ মন্ডলও একই ধরনের অভিযোগের কারণে শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন। তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ওয়াসার ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের পিডি ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আখতারুজ্জামানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্বে। অভিযোগ ছিল মাঠপর্যায়ে লোকবল নিয়োগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে আর্থিক অনিয়ম এবং দুর্নীতি করা হয়েছে।
কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পরও কমলেশ মন্ডল নির্ধারিত সময়ে কোনো প্রতিবেদন জমা দেননি। এমনকি সময় বৃদ্ধির আবেদনও করেননি। অভিযোগের গুরুতর দিক এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা বিবেচনা করে কমিশন তার এই ভূমিকা ‘অদক্ষতা, দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং অসদাচরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ফলস্বরূপ, কমিশন তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেছে।
দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, দুদকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বে অবহেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কমিশনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষতা, সময়ানুবর্তিতা ও সততার সঙ্গে কাজ করা। একজন কর্মকর্তার অবহেলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা বা অনুসন্ধান বিলম্বিত হলে তার প্রভাব পড়ে বৃহত্তর সমাজ ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে।
দুদকের মতো সংস্থার কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্তের ঘটনা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, যেসব কর্মকর্তা দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বে আছেন, তাদের বিরুদ্ধেই দায়িত্বে অবহেলা বা ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠা জনআস্থার জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে, দুদক যদি নিজেদের কর্মকর্তাদের অনিয়মে ছাড় না দেয়, তবে সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করবে যে সংস্থাটি দুর্নীতি দমনে সত্যিই কঠোর। অন্যদিকে, এ ধরনের পদক্ষেপ দুদকের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাবার্তা/এসজে