
ছবি: সংগৃহীত
শেরপুরের নকলা উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) হঠাৎ করেই বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ সংকটে পড়েছে। একযোগে দলটির উপজেলা সমন্বয় কমিটির পাঁচজন যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং দশজন সাধারণ সদস্যসহ মোট ১৫ জন পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাতে নকলা সরকারি হাজি জালমামুদ কলেজ রোডের একটি বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগী নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেন।
পদত্যাগী যুগ্ম সমন্বয়কারীরা হলেন—মো. মমিনুল ইসলাম আরব, মনিরুল ইসলাম মনির, সিরাজুল ইসলাম সোহাগ, রাশিদুল জামান রাসেল এবং জসীম উদ্দীন।
অন্যদিকে, পদত্যাগী সাধারণ সদস্যরা হলেন—মো. দেলোয়ার হোসেন, সোহেল রানা, জাহাঙ্গীর আলম, সোহাগ মোল্লা, আল আমিন মিয়া, রতন মিয়া, নাজমুল হাসান, সুমন মিয়া, আরিফ মিয়া এবং সাদেকুল ইসলাম শান্ত।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পদত্যাগী নেতারা জানান, সদ্য ঘোষিত উপজেলা কমিটি ‘অযোগ্য, অনাদর্শিক এবং সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য’ এক ব্যক্তির নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে। তাদের দাবি, এ ধরনের নেতৃত্বে তারা কোনোভাবেই কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন না। তাই দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও আত্মমর্যাদার কথা চিন্তা করে সম্মিলিতভাবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এনসিপির নকলা উপজেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির আকাশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ রয়েছে। তাকে “অযোগ্য, অনাদর্শিক ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য” আখ্যা দিয়ে পদত্যাগী নেতারা বলেন, “আমরা দীর্ঘ আত্মবিশ্লেষণ এবং সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেই এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা স্বেচ্ছায় কমিটির সব পদ থেকে পদত্যাগ করছি এবং এই পুরো কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি।”
পদত্যাগী যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. মমিনুল ইসলাম আরব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের পদত্যাগের মূল কারণ হলো প্রধান সমন্বয়কারীর চরিত্র ও যোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে শহীদ পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে। এছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতাও গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে আমরা কাজ করতে পারি না।”
অন্য নেতারাও একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে অভিযোগ করেন যে, আকাশের নেতৃত্বে থাকলে এনসিপি উপজেলা পর্যায়ে রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির শেরপুর জেলা কমিটির ১ নম্বর সমন্বয়কারী আলমগীর কবির বলেন, “আমি বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি। বিভাগীয় কমিটির সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে। আমরা জেলা পর্যায়ে বসে বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব।”
গত ১০ আগস্ট কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের স্বাক্ষরে নকলা উপজেলা সমন্বয় কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুন ঘোষিত কমিটিতে হুমায়ুন কবির আকাশকে প্রধান সমন্বয়কারী করা হয়। এছাড়া ১০ জন যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ২১ জন সাধারণ সদস্যসহ মোট ৩২ জনকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়।
পদত্যাগী ১৫ নেতার এই সিদ্ধান্তে নকলা উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির কার্যক্রমে বড় ধাক্কা লাগবে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে। কারণ, পদত্যাগকারীরা সবাই ছিলেন সক্রিয় ও অভিজ্ঞ কর্মী-নেতা। দলীয় কার্যক্রম, সংগঠন সম্প্রসারণ এবং স্থানীয় জনসংযোগে তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য ছিল। ফলে এতগুলো পদ একসাথে শূন্য হওয়ায় উপজেলা কমিটির কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পদত্যাগী নেতাদের অভিযোগ যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এটি এনসিপির জন্য কেবল একটি সাংগঠনিক সংকটই নয়, বরং দলের ভাবমূর্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আবার অনেকের মতে, এটি হতে পারে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং কমিটির নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে দলে নতুন সমীকরণ তৈরির প্রচেষ্টা।
নকলা উপজেলা এনসিপির নবগঠিত কমিটি অনুমোদনের মাত্র নয় দিনের মাথায় ১৫ নেতার একযোগে পদত্যাগ নিঃসন্দেহে দলটির জন্য বড় ধরনের আঘাত। এখন দেখার বিষয়, জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কীভাবে এই সংকট সমাধান করে এবং পদত্যাগী নেতাদের পুনরায় দলে ফেরাতে কোনো উদ্যোগ নেয় কি না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ