
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে সীমান্তের মাধ্যমে অবৈধ পণ্যের লেনদেনের প্রক্রিয়া নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্বর্ণ, হুন্ডি, মাদক ও অন্যান্য চোরাই পণ্যের লেনদেন প্রায়শই মার্কিন ডলারে করা হচ্ছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের মিয়ানমার সীমান্তে দেখা গেছে, কারবারিরা সোনাদানার মাধ্যমে ইয়াবার দাম পরিশোধ করছে। সীমান্ত এলাকা থেকে নিয়মিত ডলার ও অবৈধ স্বর্ণ জব্দ হচ্ছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম সাত মাসে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে অন্তত ৯০ হাজার মার্কিন ডলার জব্দ করা হয়েছে। সর্বশেষ, মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্ত থেকে ৫১ হাজার ডলারসহ জাহাঙ্গীর শেখ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ডলারের প্রকৃত মালিক সীমান্তের ওপারে ফিরোজ নামের একজন। জাহাঙ্গীরের পেশা কৃষক, তবে বাহক হিসেবে তাকে ব্যবহার করা হয়েছে।
বিজিবির চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নাজমুল হাসান বলেন, ‘‘অনেক সময় চোরাচালানের অর্থ ডলারে পরিশোধ করা হয়। এতে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দিকের কারবারির সংশ্লিষ্টতা থাকে। বিজিবি সার্বক্ষণিক নজরদারি চালাচ্ছে।’’
সীমান্তসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন চোরাকারবারিদের জন্য সুবিধাজনক। আন্তর্জাতিক মুদ্রায় লেনদেন করলে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজর এড়ানো যায়। অন্তর্জাতিক সীমান্ত নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘‘ডলার ও স্বর্ণে লেনদেন করার মাধ্যমে চোরাকারবারি চক্র সহজেই স্থানান্তর ও মূল অর্থ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’’
এর আগে, চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত থেকে ৮০ হাজার মার্কিন ডলার ও প্রায় আট কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছিল। সীমান্তে মাদক ও স্বর্ণসহ চোরাই পণ্যের লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, ‘‘বাড়ছে সীমান্ত চোরাচালান ও ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার। এটি কেবল সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য নয়, দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি।’’
মাদক বিশেষজ্ঞ ড. সামিউল ইসলাম মন্তব্য করেছেন, ‘‘মিয়ানমার থেকে ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ এবং ভারত থেকে ফেনসিডিলসহ গাঁজা আসছে। চোরাকারবারিরা এই পণ্যের মূল্য ডলারে পরিশোধ করছে, যা সীমান্ত এলাকায় নৈতিক ও আইনি দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি করছে।’’
বিজিবি ও পুলিশ জানিয়েছে, ডলারসহ আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ চক্রের মূল সদস্যরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, স্থানীয় বাহক ও চুনোপুঁটিরা ধরা পড়লেও মূল দালালদের শনাক্ত না করা হলে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ