
ছবি: সংগৃহীত
অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-কে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে দেশের রাজস্ব কাঠামোতে একটি বড় ধরনের সংস্কারের দ্বার খুলে গেল বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিংয়ের পর নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনতে এবং প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস করতেই এই সংশোধনী করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন সংশোধনী বাস্তবায়িত হলে দেশের রাজস্ব নীতি ও প্রশাসনিক কাঠামোতে একটি স্পষ্ট রূপান্তর ঘটবে। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যক্রমে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যে যে অস্বচ্ছতা রয়েছে, তা দূর করার চেষ্টা করা হবে। সংশোধনীতে নীতিগত পর্যায়ে রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কার্যকর সমন্বয় করার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
অতীতে রাজস্ব নীতি প্রণয়ন এবং কর প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক সময় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন, জটিল নীতি ও অস্পষ্ট ব্যবস্থাপনার কারণে বিনিয়োগ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হলে কর আদায়ে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়বে এবং একইসঙ্গে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হবে বলে আশা করছেন নীতিনির্ধারকরা।
ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলো বরাবরই রাজস্ব নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মতামত রাখার ওপর জোর দিয়ে আসছে। ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন, রাজস্ব নীতি প্রণয়নের আগে বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করলে টেকসই রাজস্ব কাঠামো গড়ে ওঠা সম্ভব হবে। নতুন অধ্যাদেশে এই বিষয়টি কতটা প্রতিফলিত হবে, তা এখন দেখার বিষয়।
সরকার বলছে, রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই সংশোধনীগুলো দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনায় অংশ নিয়ে উপদেষ্টারা বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে একটি শক্তিশালী ও স্বচ্ছ রাজস্ব কাঠামো অপরিহার্য।
অতীতে কর কাঠামোতে একাধিকবার পরিবর্তন আনা হলেও বাস্তবায়নে দুর্বলতা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও তা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। এবার সংশোধনীতে নীতিমালা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনকে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ কার্যকর হলে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী রাজস্ব ভিত্তি গড়ে তুলতে পারবে। এর ফলে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি বাড়বে, বাজেট ঘাটতি কমবে এবং সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে নতুন গতি আসবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫ শতাংশ হয়েছে। এই প্রবৃদ্ধিকে আরও টেকসই করতে হলে একটি কার্যকর রাজস্ব নীতি অপরিহার্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হলে রাজস্ব সংগ্রহের প্রক্রিয়া আরও গতি পাবে এবং অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাবার্তা/এসজে