
ছবি: সংগৃহীত
খেজুর—শুধু রমজান মাসেই নয়, সারা বছরজুড়েই এটি হতে পারে একটি অসাধারণ স্বাস্থ্য-সহযোগী ফল। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে এই ছোট কিন্তু পুষ্টিগুণে ভরপুর ফলটি যদি অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তবে শরীর ও মন দুটোই থাকবে সুস্থ ও কর্মক্ষম। বিশেষ করে যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে দুটি খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে শরীরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যাবে, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদরা বলছেন, খেজুর এমন একটি ফল যাতে প্রাকৃতিক চিনি, গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার ও প্রোটিন—সবই থাকে সুষম মাত্রায়। ফলে এটি শুধু ক্ষুধা মেটায় না, বরং শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করে এবং পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে।
নিচে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার ১০টি বিশেষ উপকারিতা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো—
১. কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি
খেজুরে উচ্চমাত্রায় দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রে পানির ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং মল নরম করতে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে কাজ করে খেজুর। এছাড়া খেজুর মুখে লালার সঞ্চালন বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়া সহজ করে।
২. মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তি উন্নত করে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খেজুর স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক। প্রতিদিন খেজুর খেলে নিউরোনের কার্যকারিতা বাড়ে, মস্তিষ্ক থাকে সতেজ, এবং আলঝেইমার বা নিউরো-ডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
৩. রক্তচাপ ও হৃদ্রোগ নিয়ন্ত্রণ
খেজুরে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের মতো খনিজ উপাদান বিদ্যমান, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাদের জন্য প্রতিদিন দুটি খেজুর অত্যন্ত উপকারী।
৪. হাড় ও দাঁত মজবুত করে
ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ উপাদান হাড়কে শক্তিশালী করে। খেজুর শিশু-কিশোরদের হাড় গঠনে সহায়ক এবং বয়স্কদের অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি কমায়। দাঁতের ক্ষয়ও কমাতে সাহায্য করে খেজুর।
৫. হাঁটুর ও অস্থিসন্ধির ব্যথায় আরাম
যাদের হাঁটুতে বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা আছে, খেজুর তাদের জন্য আদর্শ প্রাকৃতিক চিকিৎসা হতে পারে। এতে থাকা সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যালসিয়াম হাড়ের জোড়াগুলোর শক্তি বাড়ায় এবং প্রদাহ হ্রাস করে।
৬. চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করে
খেজুরে ভিটামিন ‘এ’, লুটেনিন এবং জেক্সানথিন থাকে, যা চোখের কর্নিয়া সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে চোখের ক্লান্তি দূর হয় এবং রাতকানা রোগ বা বয়সজনিত দৃষ্টিক্ষয় প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৭. প্রাকৃতিক পুষ্টির ঘাটতি পূরণ
খেজুর হলো প্রাকৃতিক শক্তি ও পুষ্টির ভান্ডার। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ ও সুক্রোজ), প্রোটিন এবং বিস্তৃত পরিসরের ভিটামিন ও খনিজ। বিশেষ করে যারা দুর্বলতা, রক্তস্বল্পতা বা শারীরিক দুর্বলতায় ভোগেন, তাদের জন্য খেজুর এক অনন্য পুষ্টিসূত্র।
৮. গর্ভবতী মা ও গর্ভজাত শিশুর জন্য উপকারী
গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে গর্ভবতী নারীর আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়, যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়া খেজুরে থাকা ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম ও ফলেট শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের গঠনেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
৯. ব্রণ ও ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি
ভিটামিন বি৫, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ খেজুর ব্রণের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি ত্বকের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হ্রাস করে, ভেতর থেকে ত্বককে সুস্থ রাখে এবং নতুন ব্রণ গঠনের সম্ভাবনা কমায়।
১০. ত্বক টানটান ও উজ্জ্বল রাখে
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। খেজুরে থাকা ভিটামিন সি ও ডি কোলাজেন তৈরিতে সহায়তা করে, যা ত্বককে করে টানটান ও প্রাণবন্ত। ত্বকের শুষ্কতা ও বলিরেখা কমাতেও এটি কার্যকর।
অতিরিক্ত টিপস:
সকালে খালি পেটে দুটি খেজুর খাওয়ার পর এক গ্লাস কুসুম গরম পানি খেলে হজম প্রক্রিয়া আরও ভালো হয়।
খেজুর ভিজিয়ে খেলে তার পুষ্টিগুণ দ্রুত শরীরে শোষিত হয় এবং এটি বাচ্চাদের জন্যও সহজপাচ্য।
ডায়াবেটিক রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেজুর খেতে পারেন, কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকে।
খেজুর শুধু উপবাস ভাঙার একটি খাবার নয়, বরং এটি হতে পারে দৈনন্দিন সুস্থ জীবনযাপনের একটি শক্তিশালী সহযোগী। প্রতিদিন সকালে মাত্র দুটি খেজুর খাওয়ার অভ্যাস দীর্ঘ মেয়াদে দেবে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা, যা ওষুধেও পাওয়া কঠিন। তাই দেরি না করে আজ থেকেই শুরু করুন এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, এবং নিজেই টের পাবেন এর পরিবর্তন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ