
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হানিয়া আমির তাঁর সরলতা, মানবিকতা ও ভক্তদের সঙ্গে আন্তরিক যোগাযোগের জন্য বরাবরই অনুরাগীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি ভারতীয় উপমহাদেশে ঘটে যাওয়া এক হৃদয়বিদারক ঘটনার পর তাঁর একটি মানবিক প্রতিক্রিয়া এবং তাতে জন্ম নেওয়া বিতর্ক, আবেগ ও অনুরাগের স্রোত নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে এই তরুণ তারকাকে।
ঘটনার শুরু ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল, ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটননগরী পহেলগাঁওতে ঘটে যাওয়া একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘিরে। এতে প্রাণ হারান বেশ কিছু নিরীহ মানুষ। সামাজিক মাধ্যমে এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই যখন জাতীয়তাবাদী আবেগে মুখর হয়ে ওঠেন, তখন হানিয়া আমির এক ব্যতিক্রমী অবস্থান নেন। তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লেখেন— “যে কোনো স্থানের দুর্ঘটনাই আমাদের কাছে সমানভাবে বেদনাদায়ক। এই ঘটনায় যে নিরীহ মানুষগুলো প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের জন্য আমার মন ভীষণ ভারাক্রান্ত। যন্ত্রণা, শোক ও আশা— এই তিন মিলে এখন সবাই একত্রিত। আমরা যে দেশেই থাকি না কেন, শোকের ভাষা একটাই— মানবতা।”
এই মানবিক বার্তা দিয়ে হানিয়া শুধু পাকিস্তানেই নয়, ভারতের বহু সাধারণ মানুষের মনও জয় করে নেন। তাঁর কথা অনেকেই শেয়ার করেন এবং মন্তব্যে জানান, এমন সহানুভূতিশীল কণ্ঠই আজকের সময়ের প্রয়োজন। অনেক ভারতীয় ভক্তই হানিয়ার এই মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লেখেন, ‘‘আপনি আমাদের সঙ্গে কাঁদছেন, এজন্য আপনাকে ভালোবাসি।’’
তবে ঘটনার আবেগপূর্ণ প্রতিক্রিয়া সেখানেই থেমে থাকেনি। ঘটনার পরপরই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানি শিল্পীদের বিরুদ্ধে নানা বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা আসে। এই প্রেক্ষিতে বেশ কিছু পাক শিল্পীর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ভারতে ব্লক করে দেওয়া হয়। যাঁদের মধ্যে অন্যতম হানিয়া আমির।
এই সিদ্ধান্তে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও শহরের হানিয়ার অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী ব্যথিত হন। হানিয়ার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারায় সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে হতাশা, ক্ষোভ ও আবেগ। অনেকেই বলেন— এটা শুধু একজন শিল্পীর বিরুদ্ধে নয়, মানবিক সংযোগের ওপরও নিষেধাজ্ঞা।
তবে ভালোবাসার পথ কেউ আটকাতে পারে না। অনেক ভারতীয় ভক্ত হানিয়ার ইনস্টাগ্রামে প্রবেশ করতে শুরু করেন ভিপিএন (VPN) প্রযুক্তির মাধ্যমে। এক ভক্ত লিখেছেন—“আপনাকে দেখার জন্য আমরা ভিপিএন পরিষেবা নিয়েছি। আপনি আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
আরেকজন লিখেছেন— “আপনার সব ছবি, ভিডিও আমরা এখনো দেখি, আপনার কথা খুব মনে পড়ছে।”
এসব মন্তব্য দেখে আবেগাপ্লুত হানিয়া নিজেই লিখে ফেলেন— “আমি কিন্তু এবার কেঁদে ফেলব।”
এই সহজ অথচ হৃদয়ছোঁয়া প্রতিক্রিয়ায় আবারো প্রমাণ হয়, জনপ্রিয়তা শুধু অভিনয় থেকে আসে না—মানবিকতা, ভালোবাসা আর মানুষের প্রতি আন্তরিকতা দিয়েও তারকা হয়ে ওঠা যায়।
হানিয়া আমির বরাবরই ছিলেন একটু ভিন্ন ধরনের শিল্পী। সামাজিক ইস্যুতে তিনি মুখ খোলেন খোলামেলাভাবে, সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে দেন সাহসী মতামত। কখনো মানবাধিকার, কখনো নারী অধিকার, আবার কখনো সাধারণ মানুষের কষ্ট—সবকিছুর প্রতিক্রিয়ায় তিনি দাঁড়ান একজন মানবিক মানুষ হিসেবে।
এই ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়। পহেলগাঁও দুর্ঘটনায় তাঁর সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে তিনি যে শুধু নিজের ভক্তসংখ্যা বাড়িয়েছেন তা নয়, বরং প্রমাণ করেছেন, শিল্পীরা কেবল বিনোদনের মাধ্যম নন—তারা হতে পারেন সমাজের অন্যতম বিবেক।
যখন রাজনীতি, কূটনীতি আর সীমান্তের বিভাজন মানুষের হৃদয়েও দেওয়াল তোলে, তখন হানিয়া আমিরের মতো শিল্পীর আবেগঘন বার্তা যেন সেই দেওয়ালের ফাঁকে একফোঁটা আলো। তাঁর কথায় একটুকরো আশার বার্তা— ‘‘শোকের একটাই ভাষা, সেটা মানবতা।’’
এমন সময়, যখন নিষেধাজ্ঞা আর বিদ্বেষ পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরিয়ে দিচ্ছে, তখন একজন হানিয়া আমির চোখের জলে নয়, ভালোবাসা আর সংবেদনশীলতায় বুঝিয়ে দেন— আমরা সবাই একে অপরের মানুষ, কাঁদার মতো যদি কিছু থাকে, সেটাও একসঙ্গে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ