
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ছোটপর্দার অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী বরাবরই আলোচনায় থাকেন তার অভিনয়, জীবনযাপন কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় উপস্থিতির কারণে। নাটক, টেলিফিল্ম ও বিজ্ঞাপনে সমান দক্ষতায় কাজ করে দর্শক-সমালোচকের প্রশংসা কুড়ানো এই তারকা শুধু শিল্পী হিসেবেই নয়, বরং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবেও ভক্তদের কাছে অনুসরণযোগ্য হয়ে উঠেছেন। নিয়মিত নানা মুহূর্তের ছবি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কিংবা সামাজিক বার্তা তিনি শেয়ার করেন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম পেজে। আর সেখানেই লক্ষাধিক ভক্ত প্রতিদিন ভালোবাসা ও সমর্থন জানান। তবে এবার তিনি অন্য এক কারণে আলোচনায় এসেছেন—সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া নেতিবাচক মন্তব্য ও কটূক্তি নিয়ে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট শেয়ার করেন মেহজাবীন চৌধুরী। সেখানে তিনি সরাসরি উল্লেখ করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া প্রোফাইল থেকে বাজে মন্তব্য করা, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা কিংবা ব্যক্তিগত আক্রমণ করা মোটেই সাহসিকতার পরিচয় নয়। বরং এটি একজন মানুষের মানসিকতার নীচতা প্রকাশ করে।
তার বক্তব্যে তিনি লেখেন— “কারও পোস্টে বাজে মন্তব্য করা, স্ল্যাং ব্যবহার করা, অথবা ভুয়া প্রোফাইল দিয়ে কথা বলা আপনাকে সাহসী করে তোলে না। বরং এটা আপনার নীচ মানসিকতাকে প্রকাশ করে এবং আপনি আসলে কেমন মানুষ সেটাই দেখায়।”
পোস্টের একেবারে শেষ দিকে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন— “এত ঘৃণা আর অপরাধবোধ নিয়ে কীভাবে রাতে ঘুমাতে যান?”
বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এর সাথে সাথে বাড়ছে নেতিবাচক মন্তব্য, অশালীন ভাষা, হুমকি এবং হয়রানির মতো কর্মকাণ্ড। বিশেষ করে সেলিব্রেটিদের লক্ষ্য করে এ ধরনের বাজে মন্তব্য প্রায়ই ছড়িয়ে পড়ে, যা কেবল তাদের মানসিক কষ্টই বাড়ায় না, বরং অনলাইনে বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করে। মেহজাবীনের এই প্রতিবাদ আসলে কেবল তার জন্য নয়, বরং প্রতিটি ব্যবহারকারীর জন্য একটি শক্ত বার্তা—অনলাইনে দায়িত্বশীলতা জরুরি।
যদিও মেহজাবীন তার ওই পোস্টে মন্তব্য করার অপশন বন্ধ রেখেছিলেন, তবুও পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ার পর ভক্তরা অন্যান্য মাধ্যমে তাকে সমর্থন জানান। বিভিন্ন ফ্যানপেজ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এই প্রতিবাদী অবস্থান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই বলেন, একজন জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে তিনি যে সাহসী বক্তব্য রেখেছেন, তা ভবিষ্যতে নেটিজেনদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।
অনেকে আরও মন্তব্য করেন, সমাজে সাইবার বুলিং ও অনলাইন হয়রানি প্রতিরোধে কেবল আইন নয়, বরং সচেতনতা গড়ে তোলাই সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। এই দিক থেকে মেহজাবীনের অবস্থান প্রশংসনীয় এবং সময়োপযোগী।
এর আগেও মেহজাবীন চৌধুরী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিপফেইক প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ভক্তদের সতর্ক করেছিলেন যেন ভুয়া ভিডিও বা ছবি বিশ্বাস না করেন এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন। এবার তিনি সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়ার বাজে মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন।
অভিনেত্রী হিসেবে তিনি অসংখ্য দর্শকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক এই বক্তব্য প্রমাণ করে, তিনি কেবল পর্দার চরিত্রে সীমাবদ্ধ নন—বরং বাস্তব জীবনে একজন দৃঢ়চিত্ত কণ্ঠস্বরও বটে। সমাজে ন্যায়, সৌজন্য ও দায়িত্বশীল আচরণের পক্ষে তার অবস্থান অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার বার্তা হয়ে উঠেছে।
মেহজাবীন চৌধুরীর সাম্প্রতিক প্রতিবাদ কেবল নেটিজেনদের বাজে মন্তব্যকারীদের উদ্দেশে নয়, বরং পুরো সমাজের প্রতি একটি শক্ত বার্তা। তিনি দেখিয়েছেন, তারকা মানেই কেবল অভিনয় নয়—বরং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখাও জরুরি। তার এই অবস্থান সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার বুলিং বন্ধে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ