
ছবি: সংগৃহীত
বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারস্টার শাকিব খান দীর্ঘদিন ধরেই ঢালিউডে তার একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছেন। দর্শকের কাছে তিনি শুধু একজন নায়ক নন, বরং এক বিশেষ আবেগের নাম। এবার সেই আবেগে নতুন মাত্রা যোগ করতে তিনি হাজির হচ্ছেন নব্বইয়ের দশকের ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘প্রিন্স : ওয়ানস আপন এ টাইম ইন ঢাকা’-তে। সিনেমাটি পরিচালনা করছেন তরুণ নির্মাতা আবু হায়াত মাহমুদ, যিনি এই চলচ্চিত্র দিয়েই বড় পর্দায় তার প্রথম যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন।
নব্বইয়ের দশকের ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড— যেখানে রাজত্ব করত অপরাধ, গ্যাং কালচার, চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্রের প্রভাব। সেই সময়ের বাস্তবতা ও কল্পনার মিশেলে সাজানো হচ্ছে ‘প্রিন্স’-এর গল্প। সিনেমাটিতে শাকিব খান থাকছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে, যাকে ঘিরেই আবর্তিত হবে কাহিনি। এতে থাকছে ক্রাইম, প্রেম, অ্যাকশন ও রোমান্স— অর্থাৎ দর্শকপ্রিয় সিনেমার সব উপাদান।
নির্মাতা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিনেমাটির প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলছে। আগামী নভেম্বর থেকে শুরু হবে শুটিং। বিশেষ করে ঢাকার বিভিন্ন পুরনো লোকেশনে, যেখানে নব্বই দশকের ছাপ এখনো টিকে আছে, সেখানে দৃশ্য ধারণ করা হবে। এর পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিছু সেট নির্মাণ করা হবে।
শাকিব খানের বিপরীতে থাকবেন তিনজন নায়িকা। যদিও এখনো তাদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি, তবে প্রযোজনা সংস্থা জানিয়েছে— তারা ঢালিউড ও বলিউডের একঝাঁক জনপ্রিয় মুখকে বিবেচনা করছেন। ফলে সিনেমাটিকে ঘিরে আগ্রহ আরও বেড়েছে।
গতকাল শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকাল ৪টায় রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সিনেমার পরিচালক আবু হায়াত মাহমুদ, নায়ক শাকিব খান এবং পুরো কলাকুশলীরা একসঙ্গে পোস্টার উন্মোচন করেন। মুহূর্তেই পোস্টারটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
পোস্টারে দেখা যায়— অন্ধকার লালচে পরিবেশে মানুষের ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন এক যুবক, হাতে উঁচু করে ধরা দুটি পিস্তল। চারপাশে লেখা ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নাম— বাড্ডা, উত্তরা, গাবতলী, মোহাম্মদপুর। নিচে বড় অক্ষরে লেখা— “মেগাস্টার শাকিব খান – প্রিন্স – একদা একসময় ঢাকাতে”।
পোস্টার উন্মোচনের পর ভক্তদের প্রতিক্রিয়া ছিল অভাবনীয়। কেউ লিখেছেন, “এই সিনেমা ঢালিউডের ইতিহাস বদলে দেবে।” আরেকজন লিখেছেন, “শাকিব মানেই চমক, প্রিন্স হবে মাইলফলক।”
শাকিব খান তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্টারটি শেয়ার করে লিখেছেন— “ঘোষণা হলো এক নতুন অধ্যায়ের। শহর চিনবে তার আসল নায়ককে।” তার এই বক্তব্যে বোঝা যায়, সিনেমাটিতে তিনি একেবারে নতুন রূপে দর্শকের সামনে হাজির হতে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, পরিচালক আবু হায়াত মাহমুদ আবেগঘন ভঙ্গিতে লিখেছেন— “প্রথম চলচ্চিত্র অনেকটা প্রথম সন্তানের মতো। হাজির হচ্ছে এক নতুন মিথ— প্রিন্স : ওয়ানস আপন এ টাইম ইন ঢাকা। এক শহরের গল্প, যেখানে মেলে তার কিংবদন্তি।”
সিনেমাটি প্রযোজনা করছে শিরিন সুলতানা ও ক্রিয়েটিভ ল্যান্ড। গল্প লিখেছেন মেজবাহ উদ্দিন সুমন। আর চিত্রনাট্য করেছেন সুমন ও মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। টিমের সদস্যরা জানিয়েছেন, ‘প্রিন্স’ হবে আন্তর্জাতিক মানের এক ছবি। এতে থাকবে আধুনিক ভিএফএক্স, জমকালো গান ও জমজমাট অ্যাকশন দৃশ্য।
নির্মাতারা জানিয়েছেন, সিনেমাটি মুক্তি পাবে ২০২৬ সালের ঈদুল ফিতরে। অর্থাৎ এখনো প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় হাতে থাকলেও শুরুর দিক থেকেই দর্শকের মধ্যে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তা প্রমাণ করে— সিনেমাটি মুক্তির আগেই আলোচনায় থাকবে।
বাংলাদেশি সিনেমা শিল্প দীর্ঘদিন ধরে দর্শক সংকটে ভুগলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু সিনেমা আবারো হলে দর্শক ফিরিয়ে এনেছে। এমন প্রেক্ষাপটে শাকিব খানের মতো সুপারস্টারের হাতে বড় বাজেটের, গল্পনির্ভর একটি সিনেমা দর্শকদের মধ্যে প্রত্যাশা বাড়িয়েছে বহুগুণ।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ‘প্রিন্স: ওয়ানস আপন এ টাইম ইন ঢাকা’ শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং ঢালিউডের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশক হতে পারে। এটি সফল হলে নব্বই দশকের ঢাকার অন্ধকার জগতকে কেন্দ্র করে নির্মিত গল্প আবারও বড় পর্দায় বাণিজ্যিক সাফল্যের নতুন অধ্যায় রচনা করতে সক্ষম হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ