
ছবি: সংগৃহীত
দেশের আলোচিত ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন শুধু অভিনয়েই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তার স্পষ্টবাদী মনোভাব ও খোলামেলা মতামতের জন্য বারবার আলোচনায় আসেন। অভিনয়ের বাইরে নারী অধিকার, সামাজিক বৈষম্য, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও প্রথাগত মানসিকতার বিরুদ্ধে তিনি খোলামেলা অবস্থান নেন। সম্প্রতি তিনি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরুষদের নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। তার এই দীর্ঘ পোস্টে উঠে এসেছে তার জীবনের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক অভিজ্ঞতার ভিন্ন ভিন্ন দিক, যা তাকে আজকের বাঁধন হিসেবে গড়ে তুলেছে।
বাঁধন তার লেখার শুরুতেই স্পষ্ট করে জানান, তিনি পুরুষদের ঘৃণা করেন না। বরং তিনি ঘৃণা করেন পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে এবং নারী-পুরুষ উভয়কেই, যারা এই বৈষম্যমূলক কাঠামোকে টিকিয়ে রাখে। তার মতে, সমস্যা পুরুষ নয়, সমস্যা সেই দমনমূলক ক্ষমতার কাঠামো, যেখানে নারীকে ছোট করে দেখা হয় এবং নারী-পুরুষের সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণের একমাত্র নিয়মে আবদ্ধ রাখা হয়।
নিজের অভিজ্ঞতার কথায় বাঁধন বিশেষভাবে তার বাবার প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জীবনের নানা পর্যায়ে তার বাবা তাকে এমনভাবে গড়ে তুলেছেন, যা তাকে একদিকে আত্মবিশ্বাসী করেছে, অন্যদিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শক্তি জুগিয়েছে। বাবার শাসন, শিক্ষা ও স্নেহ তার ভেতরে নিজের অবস্থান বোঝার ক্ষমতা তৈরি করেছে।
বাঁধনের জীবনে ‘রেহানা’ চলচ্চিত্রের পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদও একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি জানান, সাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার দৃষ্টিভঙ্গি ও আত্মবিশ্বাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শুধু চলচ্চিত্রের চরিত্র নয়, বাস্তব জীবনেও সেই অভিজ্ঞতা তাকে নারী হিসেবে ভিন্নভাবে ভাবতে শিখিয়েছে।
বাঁধন তার দুই ভাইয়ের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মতের অমিল থাকলেও তার দুই ভাই সবসময় তার পাশে থেকেছেন। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো, শরিয়াহ আইনে মেয়েরা সমান সম্পত্তি না পেলেও তার দুই ভাই নিজেদের প্রাপ্য সম্পত্তি সমানভাবে তার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। বাঁধনের চোখে এটি শুধু পারিবারিক সম্পর্ক নয়, ন্যায্যতার প্রতি তাদের বিশ্বাস এবং বোনের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ।
তবে বাঁধনের জীবনের সব অভিজ্ঞতাই ইতিবাচক ছিল না। তিনি অকপটে স্বীকার করেন, তার জীবনে এমন কিছু পুরুষও ছিলেন যারা তাকে অসম্মান করেছেন, সহিংস আচরণ করেছেন, এমনকি অমানবিক ব্যবহার করেছেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তাকে ভেঙে ফেলা, দুর্বল করা। কিন্তু বাঁধনের ভাষায়, সেই পুরুষরা যতই নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছেন, ততই তাকে জ্বালিয়ে তুলেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরিত হওয়ার শক্তি তারা অজান্তেই তার মধ্যে জাগিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে তিনি তাদের প্রতিও এক ধরনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পোস্টের শেষে বাঁধন আবারও পরিষ্কার করে বলেন, “ভুল বুঝবেন না। আমি পুরুষদের অপছন্দ করি না, আমি ঘৃণা করি পিতৃতন্ত্রকে। আর হ্যাঁ, আমি পুরুষদের ভালোবাসি।” তার এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, বাঁধনের কাছে মানুষকে মূল্যায়নের মূল মানদণ্ড হলো তাদের চরিত্র, আচরণ ও মানবিকতা—তারা নারী হোক বা পুরুষ।
বাঁধনের এই খোলামেলা অভিজ্ঞতা শেয়ার আসলে শুধু ব্যক্তিগত উপলব্ধি নয়, সমাজের জন্যও একটি বার্তা। তিনি দেখিয়েছেন, পুরুষদের ঘৃণা নয়, বরং সমস্যার মূল কারণ পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতাকে বদলানো জরুরি। একইসঙ্গে তিনি তুলে ধরেছেন, ইতিবাচক সম্পর্কের মাধ্যমে পুরুষরাও নারীর জীবনে অনুপ্রেরণা হতে পারে।
আজমেরী হক বাঁধনের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তার সাহসী অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। কেউ কেউ আবার তার জীবনের উত্থান-পতনের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ