
ছবি: সংগৃহীত
প্রায় ১৬ বছর পর আবারও চালু হতে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য পুরনো কাঠামোর বৃত্তি পরীক্ষা। ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) চালুর কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই পরীক্ষাটি এখন আবার আলাদাভাবে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফলে এ বছর থেকেই পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার পর ডিসেম্বর মাসে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুনভাবে পরীক্ষাটি আয়োজনের পাশাপাশি বৃত্তির টাকা এবং বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এই লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, আগামী বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে এই খসড়া নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে দ্রুত প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বর্তমানে যারা ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় তারা মাসে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ কোটায় বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ২২৫ টাকা করে পেয়ে থাকে। প্রস্তাবিত নীতিমালায় এই দুই ধরনের বৃত্তির অর্থ যৌক্তিকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে ৮২ হাজার ৫০০ হলেও তা বাড়িয়ে এক লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
নতুন নীতিমালায় পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতিতেও কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ রয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মোট শিক্ষার্থীর ২০ শতাংশকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। এই অংশগ্রহণের হার আরও বাড়ানো সম্ভব কি না, তা নিয়েও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পিইসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে ২০২২ সালে এসে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে পিইসি পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বাতিল করে দেয়। এর ফলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবর্তিত বৃত্তিও বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০২২ সালের শেষদিকে সরকার হঠাৎ আবার বৃত্তি পরীক্ষা চালুর ঘোষণা দেয়, যা শুরু থেকেই নানা সমালোচনার জন্ম দেয়।
শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তোলেন, যখন পিইসি বাতিল করে পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়ন থেকে বের হয়ে নতুন কৌশলে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের কথা বলা হচ্ছে, তখন আবার বৃত্তির নামে পরীক্ষা নেওয়া কতটা যৌক্তিক। কিন্তু প্রশাসন নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল এবং সেই বছরের শেষেই বৃত্তি পরীক্ষা নেয়।
তবে পরীক্ষা শেষ হলেও ফল প্রকাশে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, তাতে রয়েছে অসংখ্য ভুল, যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে অভিভাবকরা। পরে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় ফল স্থগিত করে নতুন করে সংশোধিত ফল প্রকাশ করতে।
২০২৩ সালে আবারও বৃত্তি পরীক্ষার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
তবে এবার সরকার আরও সুসংগঠিতভাবে, আগেভাগেই নীতিমালা তৈরি করে এবং পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েই বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে চায়। গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ঘোষণা করেন, “প্রাথমিকে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয়েছে। বৃত্তিও আমরা চালু করতে যাচ্ছি।”
বর্তমানে বিদ্যমান ব্যবস্থায় উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডভিত্তিক কোটা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তি প্রদান করা হয়। সর্বশেষ বৃত্তিতে ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুল এবং ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন সাধারণ বৃত্তি পেয়েছিল। এই সংখ্যা বাড়িয়ে ভবিষ্যতে আরও বেশি শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ সরকারের।
এই পুনঃপ্রবর্তিত বৃত্তি পরীক্ষাটি শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, তবে এ নিয়ে বিতর্ক এবং মতভেদও রয়েছে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিশুদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমিয়ে বিকল্প উপায়ে মেধা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করাই সময়ের দাবি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত মূল্যায়নের পাশাপাশি তাদের উৎসাহিত করাই মূল লক্ষ্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ