
ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আগামী ১০ জুলাই (বৃহস্পতিবার)। দেশের সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর সঙ্গে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনও একই দিনে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে ফলপ্রকাশের সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলো।
সোমবার (৭ জুলাই) সকালে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন, “১০ জুলাই সকাল ১০টায় একযোগে সারাদেশে ফল প্রকাশ করা হবে।” শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত ওয়েবসাইট ও মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে তাদের ফল জানতে পারবে বলেও জানান তিনি।
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মোট ১৮ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন পরীক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় (মাদরাসা বোর্ড) অংশ নেয় ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনাল ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন পরীক্ষার্থী।
এবারের পরীক্ষায় ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের সংখ্যা কিছুটা বেশি। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৯ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ছিলেন ছাত্রী, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর একটি ইতিবাচক প্রবণতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং শেষ হয় ১৫ মে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে হয়। সে অনুযায়ী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ফল প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকলেও, নির্ধারিত সময়ের আগেই ফল প্রকাশ করছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ফলাফল প্রকাশের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ১০ জুলাই সকাল ৯টার দিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বোর্ডের কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে ধরবেন। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য ফল উন্মুক্ত করা হবে।
ফলাফল জানার জন্য শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে না দীর্ঘ সময়। ফলপ্রকাশের দিন সকাল ১০টা থেকেই ফলাফল অনলাইনে ও মোবাইলে পাওয়া যাবে।
নিচের উপায়ে ফল জানা যাবে—
অনলাইনে:
-
নিজ নিজ বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে শিক্ষার্থীরা রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ফল দেখতে পারবে।
-
বোর্ডগুলোর পাশাপাশি www.educationboardresults.gov.bd সাইটেও ফল দেখা যাবে।
মোবাইল এসএমএস:
প্রতিটি বোর্ডের নির্ধারিত ফরম্যাটে মোবাইল থেকে এসএমএস পাঠিয়ে ফল জানা যাবে। ফরম্যাটটি হবে এমন:
SSC <space> বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর <space> রোল নম্বর <space> ২০২৫
পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।
উদাহরণ:
SSC DHA 123456 2025 → পাঠাতে হবে 16222 নম্বরে।
ফলাফলে থাকছে জিপিএ ও বিষয়ভিত্তিক নম্বর
ফলাফলে শুধু গ্রেড নয়, বিষয়ভিত্তিক নম্বর ও গ্রেড পয়েন্টও পাওয়া যাবে। এছাড়া ফলাফলে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা, পাসের হার এবং বোর্ডওয়ারি ফলাফল বিশ্লেষণও প্রকাশ করা হবে।
ফলাফলে যদি কোনো শিক্ষার্থী সন্তুষ্ট না থাকে, তাহলে ফল পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে। ফল প্রকাশের পরদিন থেকেই মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করা যাবে। আবেদন করা যাবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে, সাধারণত ফল প্রকাশের পরবর্তী ৭ থেকে ১০ কর্মদিবস পর্যন্ত।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ দেশের অন্যান্য বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফলাফলের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। ফলাফল প্রস্তুতিতে কোনো ত্রুটি যেন না থাকে, সে বিষয়েও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। যেকোনো ধরনের কারিগরি জটিলতা এড়াতে সার্ভার ব্যাকআপ, টেকনিক্যাল সাপোর্ট টিম ও জরুরি যোগাযোগ চ্যানেলও সক্রিয় রাখা হবে।
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলপ্রকাশ দেশের প্রায় ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই ফলাফলের ওপর নির্ভর করেই তারা কলেজ বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে। শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, সময়মতো ফলাফল প্রকাশ শিক্ষা প্রশাসনের জন্য একটি বড় অর্জন। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ার পথে যেন কোনো বিলম্ব না হয়, সে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়েছে।
ফল প্রকাশের দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ও গণমাধ্যমে ফলাফল সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা প্রকাশ করা হবে। শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করা হচ্ছে, ফলাফল জেনে ধৈর্য ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যেতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ