
ছবি: সংগৃহীত
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর ঘিরে আবারও বড় ধরনের অনিয়ম ও পাচারের ঘটনা সামনে এসেছে। সম্প্রতি বন্দরের বাইপাস সড়ক থেকে আড়াই কোটি টাকার বেশি মূল্যের ভারতীয় পণ্য জব্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বন্দরের ভেতরে সক্রিয় সিন্ডিকেট, শুল্ক ফাঁকি ও প্রভাবশালী মহলের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে এক ভারতীয় ট্রাক থেকে গোপনে বিপুল পরিমাণ পণ্য নামানো হয়। নিয়মমাফিক কাস্টমস প্রক্রিয়া এড়িয়ে কৌশলে ওই পণ্য একটি বাংলাদেশি ট্রাকে খালাস করা হচ্ছিল। রাতের আঁধারে এবং সিসি ক্যামেরার আওতার বাইরে এই কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিষয়টি টের পেয়ে যায়। পরে তারা বাংলাদেশি ট্রাকটিকে বাইপাস সড়ক থেকে আটক করে বেনাপোল বিওপিতে নিয়ে যায়।
ট্রাক তল্লাশি করে কর্তৃপক্ষ যে সব পণ্য উদ্ধার করে, তার মধ্যে রয়েছে—
-
১,৪৭৬ পিস ভারতীয় শাড়ি
-
২১৫ পিস থ্রি-পিস
-
মোটরসাইকেলের দুইটি টায়ার
-
১০,৬৯৩ পিস বিভিন্ন ধরনের ওষুধ
-
৭৪,৪৫৫ পিস কসমেটিকস সামগ্রী
-
একটি কার্গো ট্রাক
সব মিলিয়ে এসব পণ্যের আনুমানিক বাজারমূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম রেজা বলেন, ‘‘গোপন তথ্য পাওয়ার পর বিজিবি সফলভাবে অভিযান চালায়। তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। কমিটির রিপোর্ট হাতে এলে বোঝা যাবে কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’’ তিনি আরও জানান, ‘‘সিন্ডিকেটের এই ধরনের অপকর্মে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।’’
অন্যদিকে স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী অভিযোগ তুলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বন্দরে একটি প্রভাবশালী চক্র সক্রিয়। তাদের দাবি, ওই চক্র বন্দরের ভেতরে কাস্টমস ও আনসারের কিছু অসাধু সদস্যকে ‘ম্যানেজ’ করে গোপনে বিপুল পরিমাণ পণ্য পাচার করে আসছে। পরিচ্ছন্ন ব্যবসায়ীরা এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন।
ঘটনার পর বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তার নীরবতায় বিষয়টি আরও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। রাজস্ব আয়েও এ বন্দর বড় ভূমিকা রাখে। অথচ বছরের পর বছর ধরে একই কায়দায় পাচারচক্র সক্রিয় থেকে যাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ মনে করছেন, শক্ত হাতে দমন না করলে এই সিন্ডিকেট কখনোই ভাঙবে না।
বাংলাবার্তা/এসজে