
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে আরও গতিশীল ও সহজতর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানির বিপরীতে অগ্রিম আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি পরিবর্তন করেছে। এত দিন বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম পাওয়া রপ্তানি আয়ের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রপ্তানিকারকদের হাতে পর্যাপ্ত নগদ প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং তাদের উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়া সহজতর করার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াতে হলে রপ্তানিকারকদের তারল্য সংকটমুক্ত রাখা জরুরি। এই নীতি শিথিলতা কার্যকর হলে রপ্তানি খাত নতুন গতি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পূর্ববর্তী নীতিমালায় বলা ছিল, বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে রপ্তানির জন্য অগ্রিম যে অর্থ আসবে, তার ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। অর্থাৎ রপ্তানিকারকের হাতে পুরো অর্থ থাকত না, একটি অংশ আটকে রাখা হতো ভবিষ্যৎ ঝুঁকি মোকাবিলার উদ্দেশ্যে। তবে নতুন সিদ্ধান্তে এই শর্ত তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন রপ্তানিকারকরা অগ্রিম অর্থ পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারবেন।
তবে এ সুবিধা ভোগ করতে হলে কিছু শর্ত মানতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট করেছে—
-
রপ্তানিকারকের কাছে নিশ্চিত এলসি (Letter of Credit) বা বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে বৈধ চুক্তি থাকতে হবে।
-
সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারকের পূর্ববর্তী রপ্তানি কার্যক্রম অবশ্যই সন্তোষজনক হতে হবে।
-
অর্ডার সম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকতে হবে।
-
অগ্রিম পাওয়া অর্থ অবশ্যই সুদমুক্ত হতে হবে।
এই শর্তগুলো মানা না হলে কোনো রপ্তানিকারক এ সুবিধা পাবেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানান, এ শিথিলতা রপ্তানিকারকদের নগদ অর্থের প্রবাহ বাড়াবে। আগে অগ্রিম অর্থের একটি অংশ আটকে থাকার কারণে তারা কাঁচামাল কিনতে বা উৎপাদন কার্যক্রমে পুরোপুরি বিনিয়োগ করতে পারতেন না। এখন সেই সীমাবদ্ধতা দূর হবে। এর ফলে কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত থাকবে, রপ্তানি সময়মতো সম্পন্ন হবে এবং নতুন অর্ডার গ্রহণেও সুবিধা হবে।
তবে শুধু সুবিধা দেওয়াই নয়, লেনদেনের স্বচ্ছতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে, যেন কোনো ধরনের অনিয়ম বা ভুয়া লেনদেন না ঘটে। প্রকৃত লেনদেন হচ্ছে কি না, তার সঠিক প্রমাণ রাখতে হবে ব্যাংকগুলোর কাছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী মহল মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত রপ্তানি খাতের জন্য ইতিবাচক একটি বার্তা। দেশের রপ্তানি আয়ের বড় অংশ আসে তৈরি পোশাকশিল্প থেকে, যেখানে অগ্রিম অর্থ ব্যবহার করে কাঁচামাল সংগ্রহ অত্যন্ত জরুরি। এ খাত ছাড়াও চামড়া, হিমায়িত মাছ, ওষুধ এবং তথ্যপ্রযুক্তি সেবাখাতের মতো অন্যান্য রপ্তানি শিল্প এ সিদ্ধান্ত থেকে উপকৃত হবে।
একজন পোশাক রপ্তানিকারক বলেন, “আমরা বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ পাই, কিন্তু তার পুরোটা কাজে লাগাতে পারতাম না। এখন এই শর্ত তুলে দেওয়ায় আমাদের উৎপাদন ব্যয় নির্বাহ সহজ হবে
অর্থনীতিবিদদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট এবং বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব মোকাবিলায় রপ্তানি বাড়ানো এখন জরুরি। রপ্তানিকারকদের হাতে নগদ প্রবাহ বাড়লে তারা দ্রুত অর্ডার সম্পন্ন করতে পারবেন, ফলে রপ্তানি আয়ও সময়মতো দেশে আসবে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে যে, এ নীতিগত পরিবর্তন দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং ব্যবসায়ীরা আরও উৎসাহিত হবেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ