
ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মুসলমান ইসলামের এই মহান বিধান পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনার পথে রওনা হন। বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনে সৌদি আরব যান। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৬ সালের হজ মৌসুমকে সামনে রেখে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ২৭ জুলাই থেকে। এ উপলক্ষে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে।
গত সোমবার (২১ জুলাই) সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। সভায় ২০২৬ সালের হজ ব্যবস্থাপনার সার্বিক দিক ও সৌদি সরকারের নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৬ সালে হজে যেতে ইচ্ছুক মুসলমানদের প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য চার লাখ টাকা জমা দিতে হবে। এ টাকা জমা দিয়েই হজযাত্রীদের নাম একটি সম্ভাব্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরপর, সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুরো হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত হলে বাকি টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
সভায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সৌদি সরকারের নির্ধারিত রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ১২ অক্টোবর ২০২৫-এর মধ্যে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যেই আগ্রহী হজযাত্রীদের প্রাথমিক নিবন্ধন, হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর অবশিষ্ট অর্থ জমাদান এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
হজের চূড়ান্ত প্যাকেজ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি পর্বের ব্যয়, বাসস্থান, খাদ্য, পরিবহন ও বিমান ভাড়া নির্ধারণ হওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ২০২৬ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। প্যাকেজ ঘোষণার পর যাত্রীরা সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কোন প্যাকেজ অনুযায়ী হজ পালন করবেন।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে আগ্রহী হজযাত্রীরা নিচের মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে পারবেন— জাতীয় হজ পোর্টাল (www.hajj.gov.bd), ‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (UDC), ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয়, জেলা ও বায়তুল মোকাররম অফিস, আশকোনা হজ অফিস।
অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদেরকে অনুমোদিত হজ এজেন্সির মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। বেসরকারি এজেন্সিগুলোও হজ রোডম্যাপ অনুসরণ করে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এই সভায় উপস্থিত ছিলেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা ও হজ সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন— ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার, ড. মো. আয়াতুল ইসলাম, হজ অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মো. মঞ্জুরুল হক, হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার, হাব-এর মহাসচিব ফরিদ আহমদ মজুমদার, হাব-এর নির্বাহী কমিটির সদস্যরা।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, সৌদি সরকারের ঘোষিত হজ রোডম্যাপের আলোকে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনায় সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সৌদি আরব এখন অনেক আগেভাগেই হজ ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতির জন্য সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে তথ্য ও পরিকল্পনা বিনিময় করছে। তাই বাংলাদেশকেও আগেভাগেই নিবন্ধনসহ সকল আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৬ সালের হজ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিনির্ভরতা আরও জোরদার করা হবে। ‘ই-হজ’ সিস্টেমের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ, তথ্য যাচাই, টাকা জমা, ফ্লাইট সূচি প্রকাশসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। এতে সময় বাঁচবে এবং যাত্রীরা সহজেই নিজের আবেদন ও প্রক্রিয়ার অগ্রগতি দেখতে পারবেন।
২০২৬ সালের হজের প্রস্তুতি কার্যক্রম অনেক আগেই শুরু হয়েছে। ২৭ জুলাই থেকে প্রাথমিক নিবন্ধনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হবে এই পবিত্র দায়িত্ব পালনের। ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা হজযাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেকোনো প্রশ্ন বা সহায়তার জন্য যাত্রীরা নির্ধারিত অফিসগুলোতে যোগাযোগ করতে পারবেন।
প্রত্যাশা করা হচ্ছে, সুষ্ঠু ও নিরাপদ ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীরা আগামী বছরও নির্বিঘ্নে হজ পালন করতে পারবেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ