
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান সময়ে কম বয়সেই অনেকের মাথায় সাদা চুল দেখা যায়, যা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই অনেক তরুণ-তরুণী উদ্বিগ্ন থাকেন। বিশেষ করে বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এলে এই চুল পাকা একটি মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, কেউ আবার ঘরোয়া উপায়ে সমাধান খোঁজেন। তবে অনেকেই প্রশ্ন করেন—ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই অবস্থায় চুল রং করা কি বৈধ?
একজন ২৫ বছর বয়সী তরুণ একই প্রশ্ন করেছেন ইসলামিক গবেষণাভিত্তিক এক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। তিনি জানান, আগামী বছর তার বিয়ের পরিকল্পনা রয়েছে এবং পরিবার ইতোমধ্যেই তার জন্য উপযুক্ত পাত্রী খোঁজা শুরু করেছে। কিন্তু এ বয়সেই মাথার কিছু চুল সাদা হয়ে যাওয়ায় তিনি তা নিয়ে চিন্তিত। তার এক বন্ধু পরামর্শ দিয়েছেন কালো খেযাব ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু শরীয়ত অনুযায়ী এটি বৈধ কি না—এ নিয়ে তার সংশয় রয়েছে।
ইসলামic দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, কালো খেযাব ব্যবহার সম্পর্কে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে, বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য। তবে অল্প বয়সে যদি কারো চুল অস্বাভাবিকভাবে পেকে যায় এবং তা কোনো রোগ বা শারীরিক সমস্যার কারণে হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে কালো খেযাব ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসলামি বিশেষজ্ঞগণ।
হাদিসের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়:
সহীহ মুসলিম (হাদিস ২১০২)-এ এসেছে, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আবু বকর রা.-এর পিতা আবু কুহাফা রা.-কে হাজির করা হয়। তখন তার চুল ও দাঁড়ি ছিল সম্পূর্ণ সাদা। নবীজি বলেন: “এই বার্ধক্যের চিহ্নকে কিছু দিয়ে পরিবর্তন করো, তবে কালো রং ব্যবহার করবে না।”
অন্য এক বর্ণনায় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “বার্ধক্যের চিহ্ন পরিবর্তন করো, তবে ইহুদিদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না। কালো রং থেকে বিরত থাকো।” (সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৭/৩১১)
এ থেকে বোঝা যায়, কালো খেযাব ব্যবহার নিয়ে সতর্কতা মূলত বার্ধক্যজনিত সাদা চুলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ এমন বয়সে যখন কারো চুল স্বাভাবিক নিয়মেই পেকে যাওয়ার কথা, তখন কালো খেযাব ব্যবহার শরীয়ত পরিপন্থী।
যারা বয়সে তরুণ, তাদের জন্য চুল পাকলে কিছুটা ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামী ফিকহে দেখা যায়। ইমাম যুহরী (রহ.) বলেছেন: “যখন আমাদের চেহারায় যৌবনের লাবণ্য ছিল, তখন আমরা কালো খেযাব ব্যবহার করতাম। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা আমরা ছেড়ে দিয়েছি।” (ফাতহুল বারী ১০/৩৬৭)
অর্থাৎ, যুবকদের জন্য চুলের স্বাভাবিক রঙ বজায় রাখতে কালো খেযাব ব্যবহার কিছুটা অনুমোদিত ছিল। এটি নবীজীর যুগে সাহাবায়ে কেরামরাও করেছেন।
তবে বর্তমান যুগের আলেমগণ আরও পরিপূর্ণতা ও ভারসাম্য বজায় রেখে বলেন, কালো খেযাব ব্যবহার করা গেলেও পুরোপুরি কুচকুচে কালো না করে তা কিছুটা লালচে বা মেহেদী রঙের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা উত্তম। এতে শরীয়তের সতর্কবার্তাও মানা হয় এবং সামাজিক সৌন্দর্যবোধও বজায় থাকে।
অল্প বয়সে যদি চুল পেকে যায় এবং তা কোনো অসুস্থতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে হয়ে থাকে, তাহলে শরীয়ত অনুযায়ী সে ক্ষেত্রে কালো খেযাব ব্যবহার করা জায়েজ রয়েছে। তবে ইসলাম এমন রঙ ব্যবহারে উৎসাহ দেয় না যা অন্যকে ধোঁকা দেয় বা বাস্তবতা আড়াল করে। তাই পরিমিতভাবে ও ভারসাম্য বজায় রেখে ব্যবহার করাই উত্তম। শরীয়তের বিধান মেনে চলার পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাস বজায় রাখাটাও একজন মুসলিমের সৌন্দর্যের অংশ।
তথ্যসূত্র:
রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫৬; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/১৫৪; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/১৪৯; জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/২২৮; সহীহ মুসলিম, সুনানে কুবরা, ফাতহুল বারী।
বাংলাবার্তা/এমএইচ