
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড় শাহবাগে শুক্রবার বিকালে নাটকীয় মোড় নেয় জাতীয় রাজনীতি। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর নেতাকর্মীরা। বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে এ অবরোধ শুরু হয়, যা কয়েক ঘণ্টা ধরে শাহবাগ এলাকা অচল করে তোলে।
এর আগে দুপুর পৌনে তিনটার দিকে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পাশের সড়কে আয়োজিত এক গণসমাবেশ থেকে শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা আসে। এ সমাবেশের নেতৃত্ব দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সমাবেশে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা ‘বাংলাদেশ উইদাউট আওয়ামী লীগ’ স্লোগান তুলে দাবি করেন— দেশের অগ্রগতি শুরু হবে কেবল তখনই, যখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে এবং তা সরকারিভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
হাসনাতের বক্তব্য: ‘বাংলাদেশ উইদাউট আওয়ামী লীগ’ হতে হবে নতুন টাইটেল
সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশের অগ্রগতির সূচনা হবে সেই দিন থেকে, যেদিন বাংলাদেশ নাম পাবে ‘বাংলাদেশ উইদাউট আওয়ামী লীগ’। আমরা সেই টাইটেল দেওয়ার জন্য এই জায়গায় মানুষের সমাগম করছি। এখান থেকেই আমরা শাহবাগ মোড়ে রওনা হবো এবং রাস্তা অবরোধ করব।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ইন্টারিম সরকারের কানে আওয়াজ পৌঁছে দিতে পারিনি। আহতদের কান্না, তাদের আর্তনাদও পৌঁছায়নি। তাই এবার আমরা শাহবাগ অবরোধ করব এবং এই অবস্থান চলবে যতক্ষণ না আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।”
মিছিল ও স্লোগানে উত্তাল শাহবাগ
ঘোষণার পরপরই আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হন। মুহূর্তেই ব্যস্ত এ সড়ক জ্যামে অচল হয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীদের হাতে দেখা যায় নানা ধরনের ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড, যেখানে লেখা ছিল “Sheikh Hasina Must Go”, “Ban Awami League Now”, “No Democracy with AL” ইত্যাদি।
প্রতিবাদকারীরা রাস্তার ওপর বসে পড়েন, কিছু জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে প্রতীকী প্রতিরোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। পুলিশ শুরুতে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও পরে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে মাঠে নামতে দেখা যায়। তবে কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি, তবে পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনায় মুখর এনসিপি
সমাবেশে এবং অবরোধ চলাকালীন নেতারা অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো জনগণের কণ্ঠস্বর শুনছে না। তারা দাবি করেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে, প্রশাসন দলীয়করণ হয়েছে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়েছে। এ অবস্থায় এনসিপি মনে করে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাই হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রথম ধাপ।
যমুনার সামনেও চলেছে বিক্ষোভ
এর আগেই বৃহস্পতিবার রাত থেকে এনসিপির নেতাকর্মীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। সেখানে রাতভর অবস্থান কর্মসূচি চলেছে। শুক্রবার সকালেও তাদের ওই এলাকায় স্লোগান দিতে দেখা যায়। এনসিপির নেতাকর্মীরা বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়ছে
শাহবাগে এমন বিক্ষোভ বিরল নয়, তবে এবার যে মাত্রায় জনগণের অংশগ্রহণ এবং সরাসরি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার দাবি উঠে এসেছে, তা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে এখন প্রকাশ্য আন্দোলনে নামছে ছোট ও মধ্যম মানের রাজনৈতিক দলগুলো।
তারা মনে করেন, এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে শাহবাগের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় এমন অবরোধ এবং সরকারের প্রতি উগ্র দাবির ভাষা ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এখন কী করবে সরকার?
এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এনসিপির দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা এখানেই অবস্থান করবেন যতক্ষণ না তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি কত দীর্ঘ হবে এবং পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কোন দিকে মোড় নেবে।
এই বিক্ষোভকে ঘিরে রাজধানীতে আতঙ্ক ও যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে এনসিপি বলছে, তারা এই দুর্ভোগের জন্য দায়ী নয়; বরং দেশের ভবিষ্যতের জন্য এই আন্দোলন জরুরি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ