
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ ঘটেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বসুন্ধরায় ডা. শফিকুর রহমানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
চীন দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ক্রমেই প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশও চীনের অন্যতম কৌশলগত সহযোগী দেশ হিসেবে পরিচিত। এমন প্রেক্ষাপটে চীনা রাষ্ট্রদূতের জামায়াত আমিরের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও বৈঠকটি ছিল ‘সৌজন্যমূলক’, তবুও এর মধ্যে রয়েছে একাধিক রাজনৈতিক বার্তা।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বৈঠকের শুরুতে ডা. শফিকুর রহমানের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন এবং তার সুস্থতা কামনা করেন। এরপর তারা কুশলাদি বিনিময় ছাড়াও বাংলাদেশের চলমান সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও মতবিনিময় হয়।
এসময় জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন— সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান, তাদের উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয়, এই বৈঠক কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং কিছুটা আনুষ্ঠানিক চরিত্রও বহন করেছে।
যদিও বৈঠকে কী ধরনের নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা প্রকাশ্যে জানানো হয়নি, তবে জামায়াত নেতাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে— বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানবাধিকার পরিস্থিতি, রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণমূলক ভূমিকা, ভবিষ্যৎ নির্বাচনী প্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক।
এসব বিষয় আলোচনায় এসেছে। চীন দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাব বিস্তারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে এ বৈঠক কেবল আনুষ্ঠানিক সৌজন্যের সীমায় সীমাবদ্ধ থাকবে না বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
এর আগে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টাও জামায়াতের আমিরের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। আন্তর্জাতিক মহলের বিভিন্ন প্রতিনিধি জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, যা দলটির প্রতি কূটনৈতিক আগ্রহ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। আন্তর্জাতিক মহল হয়তো বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জামায়াতকে একটি অংশীদার দল হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
চীনের মতো প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।
সরকারি শিবিরে অনেকে এটিকে একটি কৌশলগত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন, যেখানে চীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে বিকল্প শক্তিগুলোকেও গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিরোধী দলীয় শিবিরে এটিকে একটি ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে জামায়াতের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের বৈঠক সরাসরি ক্ষমতার সমীকরণ বদল না করলেও দীর্ঘমেয়াদে কূটনৈতিক বার্তা বহন করে।
চীন সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। মেগা প্রকল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের অংশগ্রহণ রয়েছে। এবার সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের যোগাযোগ রাখা চীনের বহুমাত্রিক কূটনৈতিক কৌশলের অংশ বলেই অনেকে মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা চায়। তবে তারা জানে, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বহুমাত্রিক। তাই ভিন্ন ভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা চীনের কৌশলগত স্বার্থকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের এই সৌজন্য সাক্ষাৎ নিঃসন্দেহে রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। বৈঠকটি প্রকাশ্যে যতটা সরল দেখালেও, ভেতরে এর কূটনৈতিক গুরুত্ব অনেক। বাংলাদেশের রাজনীতির আগামী দিনে আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকা যেমন বাড়বে, তেমনি ভিন্ন দলগুলোর প্রতি বৈশ্বিক শক্তিগুলোর আগ্রহও ক্রমেই প্রকট হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ