
ছবি: সংগৃহীত
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সম্প্রতি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন এবং পরে দেশে প্রত্যাবর্তনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (৯ জুন) দুপুরে রাজধানীর ডেমরা থানার অন্তর্গত যাত্রাবাড়ী থানার কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। একপর্যায়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ ও ফেরার প্রসঙ্গ উঠলে, উপদেষ্টা সোজাসাপ্টা বলেন, “আপনারা সাংবাদিকরাই সবসময় বলেন— নির্দোষ মানুষ যেন কোনোভাবেই সাজা না পায়। আমরা সেটাই মানছি। কোনো মামলা যদি তদন্ত না হয়ে থাকে, তবে তা তদন্তাধীন থাকবে। আর যদি তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এই প্রক্রিয়ায় কারও ছাড় নেই।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা অন্ধ প্রতিশোধ বা অন্ধ প্রশাসনিক ব্যবস্থার পক্ষে নই। একজন মানুষ যত বড় পদেই থাকুন না কেন, তদন্তে তার অপরাধ প্রমাণিত না হলে আমরা তাকে সাজা দিতে পারি না। আবার কেউ অপরাধী হলে তার অবস্থান বিবেচনা না করেই তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অহেতুক গ্রেফতার না করা হয়। তিনি বলেন, “ফৌজদারি মামলায় অপরাধ মোটামুটি প্রমাণিত না হলে কাউকে গ্রেফতার করাটা অনৈতিক এবং অন্যায়। আমরা চাই, প্রকৃত অপরাধী আইনের আওতায় আসুক। নির্দোষ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়।”
এ সময় ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “এই ঈদে দেশব্যাপী কোনো বড় ধরনের অঘটনের খবর আমরা পাইনি। কিছু বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর ঘটনা যেমন সড়ক দুর্ঘটনা বা ছোটখাটো চুরি-চামারি ঘটেছে, তবে তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “ঈদকে কেন্দ্র করে পুলিশের প্রতিটি ইউনিট সক্রিয় ছিল। হাইওয়ে পুলিশ থেকে শুরু করে র্যাব, ডিবি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ সবাই নিরলসভাবে কাজ করেছে। মানুষের ঘরে ফেরা ও নিরাপদ ঈদ উদযাপনের জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তাই বলা যায়, এই ঈদে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আমরা মোটামুটি সফল হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারে। কোনো নাগরিক যেন আইন নিয়ে নিজের হাতে তুলে না নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও যেন তাদের কর্তব্য পালনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ না করে।”
সাবেক রাষ্ট্রপতির বিষয়ে আরও তদন্ত চলমান রয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা যেমন দ্রুত পদক্ষেপ চান, তেমনি ন্যায়বিচারও চান। সুতরাং আমরা তদন্তের সময় নিচ্ছি, কারণ কারো বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যেমন অনৈতিক, তেমনি অপরাধ প্রমাণিত হলে ছাড় দেওয়াও অন্যায়। আমরা দুই দিকই বিবেচনায় রেখে চলছি।”
উল্লেখ্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো অভিযোগ বা মামলা চলমান ছিল কি না বা তাঁর বিদেশ সফরের অনুমতি প্রশাসনিকভাবে কীভাবে দেওয়া হয়েছিল— তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে। তবে এ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, যথাযথ তদন্ত ছাড়া কাউকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হবে না এবং আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য থাকবে।
এভাবে রাষ্ট্রীয় পদে থাকা বা থাকা ব্যক্তিদের ব্যাপারে প্রশাসনের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, যেখানে ন্যায়বিচার এবং পেশাদার তদন্তকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ