
ছবি: সংগৃহীত
প্রতিবেশী দেশগুলোতে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে ভাইরাসটির নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারতসহ আক্রান্ত দেশগুলোতে খুব প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ না করতে জনগণকে অনুরোধ জানিয়েছে। একইসঙ্গে দেশের সব প্রবেশপথ—স্থল, নৌ ও আকাশপথে—স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় করোনাভাইরাসের নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট, বিশেষ করে অমিক্রনের এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১ শনাক্ত হয়েছে এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এসব ভ্যারিয়েন্ট তুলনামূলকভাবে অধিক সংক্রামক এবং আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা রাখে।
এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এসব সাবভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ফলে দেশব্যাপী করোনা প্রতিরোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
আজ সোমবার (১০ জুন) ডেইলি স্টারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক হালিমুর রশিদ জানান, গত ৪ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি নতুন সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এটি গতকাল (৯ জুন) তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে নতুন করে করোনা নিয়ন্ত্রণে একটি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “যদিও দীর্ঘ সময় ধরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল, তবে এখন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও গত বৃহস্পতিবার একজন করোনা আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন এবং গতকাল নতুন করে আরও তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের সকল স্থলবন্দর, নৌবন্দর এবং বিমানবন্দরের আইএইচআর (IHR) ডেস্কে নজরদারি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিটি প্রবেশপথে থার্মাল স্ক্যানার কিংবা নন-কন্টাক্ট ডিজিটাল হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার দিয়ে আগত যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।
এছাড়া এসব স্থানে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যাতে দ্রুত রোগী শনাক্তকরণ ও আইসোলেশন নিশ্চিত করা যায়।
সংক্রমণ রোধে জনগণের জন্য নির্দেশনা
করোনাভাইরাসের নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় জনসাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একাধিক নির্দেশনা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে—
দিনে অন্তত সাতবার, প্রতিবার কমপক্ষে ২৩ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে
নাক ও মুখ ঢেকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে
সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে
অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে
হাঁচি-কাশির সময় কনুই, টিস্যু বা রুমাল দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে নেওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে
কেউ অসুস্থ হলে বাড়িতে অবস্থান করতে হবে, এবং উপসর্গ গুরুতর হলে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে হবে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, কেউ যদি করোনার উপসর্গ অনুভব করেন বা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন, তবে যেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের হটলাইন নম্বরে (০১৪০১-১৯৬২৯৩) যোগাযোগ করেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দীর্ঘ বিরতির পর গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) একজন কোভিড আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে, যা করোনা পরিস্থিতি আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে। একইসঙ্গে নতুন করে সংক্রমণের হারও বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ যত দ্রুত ছড়ায়, তত দ্রুতই আগ্রাসী অবস্থানে চলে যেতে পারে। এ কারণে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা ছাড়া বিকল্প নেই।
সবশেষে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে খুব প্রয়োজন ছাড়া যেন ভারতসহ অন্য আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ না করা হয়। একইভাবে, যারা এসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আসছেন, তাদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও আইসোলেশনের আওতায় আনার ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
সরকারের এই নির্দেশনা করোনার নতুন প্রাদুর্ভাবকে মোকাবিলা করতে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর সঙ্গে জনসচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানা গেলে বাংলাদেশে করোনার পুনঃপ্রবেশ ও সম্প্রসারণ রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ