
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা-লন্ডন সম্পর্ক আরও গভীর করতে চারদিনের সফরে আজ সোমবার যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ১০ থেকে ১৩ জুন যুক্তরাজ্য সফরে যাবেন। চার দিনের সরকারি সফর তিনি ঢাকা এবং লন্ডন বাণিজ্য, বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলবেন। বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর।’
সচিবের বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শাসনব্যবস্থা ও বিশ্বজনীন উদ্বেগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দুই দেশের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ককে আরও গভীর ও বহুমুখী করতে কাজ করে যাচ্ছে। অধ্যাপক ইউনূসের ইউরোপ সফর হিসেবে এটি তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক ভ্রমণ, যা কূটনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন। এছাড়াও তিনি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি, অন্যান্য জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং দেশটির নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বজনীন সুনাম ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে অধ্যাপক ইউনূসকে রাজা তৃতীয় চার্লস ‘কিং চার্লস তৃতীয় হারমনি’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন। ১২ জুন লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবেন। এই পুরস্কার ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ‘দ্য কিংস ফাউন্ডেশন’ প্রতি বছর টেকসই উন্নয়ন, মানবিক কাজ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা ব্যতিক্রমী ব্যক্তিদের প্রদান করে থাকে। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন এই পুরস্কার লাভ করেন। ১১ জুন ফাউন্ডেশন একটি বর্ণাঢ্য ডিনার আয়োজনে এই ৩৫তম বার্ষিকী পালন করবে, যেখানে অধ্যাপক ইউনূস অংশগ্রহণ করবেন।
সফরকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎ হবে কিনা, তা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক জানান, সরকারি সফরের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতে এ ধরনের কোনো বৈঠক নির্ধারিত নেই।
এই সফরকে রুহুল আলম সিদ্দিক ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী ও স্থায়ী সম্পর্ককে এই সফর আরও সুসংহত করবে। তিনি বলেন, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৮ লাখের মতো ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বসবাস করছে, যারা রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং সাংস্কৃতিক সংযোগে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ও বৈচিত্র্যময় এবং এই সফরে বাণিজ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, সুশাসন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর জোর দেয়া হবে।
পররাষ্ট্র সচিব আরও জানান, বৈঠকগুলোতে পাচারকৃত অর্থ ও বিদেশে অবৈধ সম্পদ উদ্ধারের বিষয়টিও আলোচ্য বিষয় হতে পারে, যা আর্থিক স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ওপর ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের প্রতিফলন ঘটাবে। এছাড়া, জিএসপি প্লাস স্কিমের আওতায় যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের প্রবেশাধিকারের সম্প্রসারণ, ব্রিটিশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও সবুজ প্রবৃদ্ধিতে যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলার পরিকল্পনাও আলোচনায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অধ্যাপক ইউনূস সফরে লন্ডনে কমনওয়েলথ এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থার (আইএমও) মহাসচিবদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন, যেখানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা এবং নেতৃত্বের ভূমিকা তুলে ধরা হবে। এছাড়া ১১ জুন তিনি রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, চ্যাথাম হাউসে একটি বিশেষ ভাষণ দেবেন, যেখানে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মতামত উপস্থাপন করবেন।
এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে বলে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ