
ছবি: সংগৃহীত
থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে দীর্ঘ চিকিৎসার পর অবশেষে দেশে ফিরেছেন দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রোববার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার পর তিনি থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৩৯ ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন। স্বাস্থ্য অবস্থার কারণে বিমানে ওঠার পর থেকে তিনি হুইলচেয়ারে ছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি বেশ ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিলেন। বিমানবন্দরে তার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ এবং শ্যালক ডা. নৌশাদ খান।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন যে, আবদুল হামিদ দেশে সাধারণ যাত্রী হিসেবে এসেছেন এবং কোনো প্রটোকল বা বিশেষ আয়োজন চাননি। রাত দেড়টার দিকে ব্যাংকক থেকে বিমানের মাধ্যমে ঢাকায় পৌঁছানোর পর রাত ১টা ৪৫ মিনিটে তিনি ইমিগ্রেশন কাউন্টারে গিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। এরপর রাত পৌনে তিনটার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি।
গত বছরের আগস্ট মাসে দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রেক্ষিতে দলের অনেক শীর্ষ নেতাকর্মী দেশের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় আবদুল হামিদ নিজ দেশেই অবস্থান করেছিলেন। এরপর ২০২৪ সালের ৮ মে গভীর রাতে তিনি চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক যাত্রা করেন। তখন থেকে দীর্ঘ চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশে ছিলেন।
তবে দেশে ফিরে আসার আগে তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা ছিল, যা গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় দায়ের করা হয়। এই মামলাটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং ওবায়দুল কাদেরসহ অনেক আওয়ামী লীগ নেতার নামও ছিল। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আবদুল হামিদের বিদেশ যাওয়ার ঘটনাকে ঘিরে দেশে নানা বিতর্ক-আলোচনা শুরু হয়। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফ, তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আজহারুল ইসলাম এবং এসবির এটিএসআই মো. সোলায়মানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
অন্যদিকে, ২০২৪ সালের ১০ মে দেশের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
আবদুল হামিদ ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা দশ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালের মার্চে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের অসুস্থতা ও পরবর্তীতে মৃত্যুর পর তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। এরপর ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশে ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাহী ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল তার রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হয় এবং তাকে প্রতিস্থাপন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন এবং কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে আটবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দেশে ফিরে আসার মাধ্যমে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবন নতুন এক অধ্যায় শুরু করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘ সময় বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকার পর দেশের মাটিতে ফেরার এই সফর তার জন্য স্বাস্থ্যগতভাবে একটি নতুন সূচনা হতে পারে। পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলে তার অবস্থান ও ভূমিকা নিয়েও এখন নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।
এই সফর ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতি এবং আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন সময়ের অপেক্ষা। তবে দেশের একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ফিরে আসা সব সময়েই রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ